ধর্মঘটের বিষয়ে কোনো সংগঠন আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা না দিলেও মালিকরা ইতোমধ্যেই সদরঘাট টার্মিনাল থেকে লঞ্চগুলো অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। জ্বালানি তেলের দাম কমানো অথবা লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সড়ক পরিবহন সমিতিগুলোর ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরুর এক দিন পর লঞ্চ না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকরা।
প্রতিলিটার ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার প্রতিবাদে শুক্র ও শনিবার পল্টন কার্যালয়ে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এদিকে সরেজমিন সদরঘাটে দেখা গেছে, মানামী, সুন্দরবন, পারাবাত, ফারহান, তাসরিফ লঞ্চগুলো টার্মিনালে এলে হুমড়ি খেয়ে লঞ্চে ওঠে যাত্রীরা। কিছুক্ষণ পর মালিকদের নির্দেশে যাত্রীদের নামিয়ে লঞ্চগুলো টার্মিনাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে অসংখ্য যাত্রী।
সদরঘাটে লঞ্চের অপেক্ষায় পরিবারসহ দাঁড়িয়ে থাকা ভোলাগামী যাত্রী মুসা বলেন, ‘গণপরিবহন বন্ধ। মিরপুর থেকে সিএনজি করে সদরঘাটে আসলাম ডাবল ভাড়া দিয়ে। এসে শুনি লঞ্চ ছাড়বে না। সময় আর টাকা নষ্ট করে এত যাত্রী সদরঘাট আসছে। এসব দেখার কি কেউ নেই!’
মেসার্স ফেরারি শিপিংয়ের (এমভি তাসরিফ) ম্যানেজার জসিমউদ্দিন সময়ের আলোকে জানান, ঢাকা থেকে সর্বদক্ষিণে ভোলার বেতুয়াঘাটে যাওয়া-আসায় ৭ হাজার লিটার তেল খরচ হয়। এই রুটের যাত্রীদের মাথাপিছু ভাড়া ১২৫ বাড়ালে আমাদের লোকসান দিতে হবে না। আমরা লঞ্চ চালাতে পারব। এ ছাড়া বরিশালগামী লঞ্চে ২৫০ টাকার মাথাপিছু ভাড়া ১৫০ বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করার দাবি মালিকদের।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সভাপতি মাহবুবউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম সময়ের আলোকে বলেন, ‘আমরা ধর্মঘটের ডাক দিচ্ছি না। কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে খরচ পোষাতে না পারায় মালিকরা লঞ্চ চালাতে পারছেন না। তাই লঞ্চ বন্ধ রেখেছেন। বিআইডব্লিউটিএ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দিলে মালিকরা লঞ্চ চালাবেন।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক জয়নুল আবেদীন সময়ের আলোকে জানান, রাজধানীর বৃহত্তম লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট থেকে ইতোমধ্যে লঞ্চগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু অঞ্চলে যাত্রী বেশি, লঞ্চ কম। এসব রুটের মালিকরা সমন্বয় করে দুয়েকটি করে লঞ্চ ছেড়েছেন। বিকাল ৪টা পর্যান্ত ২৫টি লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে গেছে।
এদিকে লঞ্চের ভাড়া পুনর্নির্ধারণে লঞ্চমালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বৈঠকে বসবে রোববার। তবে এর আগে যাত্রীদের কাছ থেকে পূর্বের নির্ধারিত ভাড়া নিতে বলা হয়েছে। এর আগে গত শুক্রবার লঞ্চমালিকরা এক চিঠিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় লঞ্চের ভাড়া শতভাগ বাড়ানোর দাবিতে বিআইডব্লিউটিএকে আল্টিমেটাম দেন। চিঠিতে লঞ্চের ভাড়া প্রথম ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৪০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ১ টাকা ৪০ পয়সার পরিবর্তে ২ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। এ দাবি মানা না হলে তারাও ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, রোববার বিকালে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পর ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..