বিডি ঢাকা ডেস্ক
দেশের কৃষিপণ্য পরিবহনে সহজলভ্যতা আনতে চালু হলো কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন, কিন্তু উদ্বোধনী দিনে কোনো কৃষিপণ্য ছাড়াই ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করল ট্রেনটি। শুধুমাত্র ১৫০ কেজি ওজনের খালি ডিমের খাঁচা (ক্যারেট) নিয়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এই ট্রেন, যা প্রথম দিনেই লোকসানে পড়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা।
শনিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’টি ঢাকার তেজগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনটির ধারণক্ষমতা ১০ মেট্রিক টন হলেও প্রথম দিনে কৃষিপণ্য না পেয়ে ট্রেনটি কেবলমাত্র ১৫০ কেজি খালি ক্যারেট নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। ট্রেনটিতে সাতটি বগি রয়েছে, যার মধ্যে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, যা বিশেষভাবে ফল, সবজি, দুধ, মাংস ও হিমায়িত পণ্য পরিবহনের জন্য উপযোগী। এছাড়াও কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য ২০টি চেয়ারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
রহনপুর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ৩৪৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রমে ট্রেনটির জন্য প্রতি কেজি কৃষিপণ্যে পরিবহন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা। রাজশাহী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এই খরচ ১ টাকা ১৮ পয়সা। তবে প্রথম দিনে ১৫০ কেজি ক্যারেট পরিবহনের বিনিময়ে আয় হয়েছে মাত্র ৩৬০ টাকা, যেখানে ট্রেন পরিচালনায় খরচ পড়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩২ টাকা। এতে প্রথম দিনেই ট্রেনটি প্রায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকার লোকসানের মুখে পড়েছে।
প্রথম দিনের এই ব্যর্থতার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব ও আবহাওয়াজনিত সমস্যাকে দায়ী করেছে। পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, “আমরা প্রচারণার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষিপণ্য বাজারে ওঠা শুরু হয়েছে, আশা করছি, শিগগিরই সাড়া পাবো।”
রাজশাহী মহানগর পাইকারি কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম জানান, “ট্রেনটি আমাদের জন্য একটি সুবিধাজনক ব্যবস্থা। কিন্তু কেউ আমাদের জানায়নি যে ট্রেনটি চালু হবে। আগাম জানালে হয়তো কিছু মালামাল পাঠানো যেত।” এদিকে, রহনপুরের স্থানীয় বাসিন্দা আরাফাত রহমান বলেন, “ট্রেনের ভাড়া সস্তা হলেও পরিবহনে কুলি ও স্টেশন থেকে মোকামে পৌঁছানোর আলাদা খরচ যোগ হওয়ায় ট্রেনের চেয়ে সড়কপথের খরচ কম।”
সড়কপথের তুলনায় ট্রেনের সময়ে পরিবর্তনের কারণে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ঝামেলায় পড়তে পারেন বলেও মত প্রকাশ করেছেন অনেকে। কৃষক শফিকুর রহমান জানান, “সন্ধ্যায় সড়কপথে যাত্রা করে ফজরের সময় ঢাকায় পৌঁছানোর পরপরই পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হয়, কিন্তু ট্রেনটি সকালে ছাড়লে আমরা পণ্য কখন বিক্রি করবো, তা নিয়ে শঙ্কা আছে।”
পশ্চিম রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা একেএম রুহুল আলম জানান, “বিভিন্ন বাজারে আমরা প্রচারণা চালিয়েছি। সবজি বাজারে উঠছে, তাই কয়েকদিনের মধ্যে সাড়া পাওয়ার আশা রাখি।”
কৃষিপণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’ ট্রেনটি দেশের উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় প্রতি সপ্তাহের শনিবার যাত্রা করবে। যদিও প্রথম দিনে কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি, তবে কর্তৃপক্ষ আশা করছে পরবর্তীতে এটি কৃষকদের জন্য একটি কার্যকর পরিবহন মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হবে।