অনলাইন নিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো কারও হাত থাকে না। কিন্তু দুর্যোগের পর যেন ক্ষয়ক্ষতি কম হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ইতোমধ্যে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় আমরা কাজ শুরু করেছি। সেনাবাহিনীসহ একাধিক বাহিনী বন্যাদুর্গতদের সাহায্য করছেন। বুধবার (২২ জুন) বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পুলিশ, কোস্টগার্ড, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগসহ আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠন বন্যাদুর্গতদের সহায়তা করে যাচ্ছে। অনেক পরিবারকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ১২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বন্যাদুর্গতদের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পরামর্শ দেন। যেন বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দুই জেলা সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার এবং হবিগঞ্জও বন্যায় ? বাজার এবং হবিগঞ্জও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, জামালপুর, শেরপুর জেলাসহ ১১টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বর্ষা শুরু হয়েছে। এ সময় বন্যা হবে- এটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক বন্যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত। বন্যার পানি আমাদের কৃষি জমিকে উৰ্বর এবং সতেজ করে। ময়লা-আর্বজনা-জঞ্জাল ধুয়ে মুমা ময়লা-আর্বজনা-জঞ্জাল ধুয়ে মুছে সাফ করে নিয়ে যায়। এ ধরনের বন্যার সঙ্গে বসবাস করতে আমাদের দেশের মানুষ অভ্যস্থ। স্বাভাবিক মাত্রার বন্যা মােকাবিলা করার সক্ষমতাও আমাদের সরকারের রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত সপ্তাহে সিলেটে যে বন্যা হয়েছে তা অকল্পনীয়। এটাকে প্রলয়ঙ্করী বললেও ঠিক বুঝানাে যায় না। আসামে অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়েছে। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে তিন দিনে ২ হাজার ৫০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত শুক্রবার পর্যন্ত পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ১২২ বছরের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। মেঘালয় ও আসাম পাহাড়ি এলাকা। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত ভাটির দিকে সমতল ভূমি- সুনামগঞ্জ-সিলেটে প্রবেশ করে প্লাবিত করেছে। এ অঞ্চলের হাওর এবং নদীগুলাের স্বাভাবিক বন্যার পানি ধারণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ এবং পরিবহনের ক্ষমতা এসব হাওর বা নদীগুলাের নেই।ফলে পানি ফুলে-ফেপে উঠে গ্রাম, শহর, নগর, সড়ক-মহাসড়ক প্লাবিত করেছে। এবারের বন্যা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতম। বিগত এক শ-সােয়া শ বছরের মধ্যে এত প্রলয়ঙ্কারী বন্যা এ এলাকায় হয়নি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানাের ক্ষমতা মানুষের নেই, সরকারেরও নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমানাে এবং দুর্ভোগ লাঘবে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। কোন সরকার সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা সেটাই বিবেচ্য বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্য পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছি। কোন সময় ক্ষেপণ না করে সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং কোস্টগার্ড, পুলিশ বাহিনীকে নিয়ােজিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন বাহিনীর শতাধিক বােট, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য যানবাহন উদ্ধারকাজে নিয়ােজিত রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৫০০ জন সদস্য ৭টি হেলিকপ্টার ও পরিবহন বিমানসহ সিলেট এলাকায় উদ্ধারকার্য পরিচালনা ও ত্রাণ বিতরণের জন্য সার্বক্ষণিক নিয়ােজিত আছে।। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ এবং সহযােগী সংগঠন – ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাবেসক লীগ, কৃষকলীগের নেতাকর্মীদের দুর্গত মানুষদের সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ কাজ চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি মঙ্গলবার নিজে সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোণা জেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত সিলেট অঞ্চলে ১ হাজার ২৮৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খােলা হয়েছে। ৩০০ মেডিকেল টিম কাজ করছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বনা কবলিত ১১টি জেলায় ৯০০ মেট্রিক টন চাল এবং ৩ কোটি ৩৫ লাখ নগদ টাকা এবং ৫৫ হাজার শুকনা এবং অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলাে শুকনাে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির। আমরা তার ব্যবস্থাই করছি। আমাদের দলের নেতাকর্মীরাও সাধ্যমত দুর্গত মানুষের ঘরে শুকনাে এবং রান্না করার খাবার পৌছে দিচ্ছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে বাড়িঘর মেরামত এবং কৃষি পুনর্বাসনের কর্মসূচি হাতে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের নির্দিষ্ট করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আমি বন্যা কবলিত এলাকার জনসাধারণকে আশ্বাস দিতে চাই, সরকার আপনাদের পাশে আছে। মানুষের ভােগান্তি লাঘবে আমরা সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।