বিডি ঢাকা ডেস্ক
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট এখন চরমে। বিশেষ করে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। পাশাপাশি ৪৮টি পদ শূন্য থাকায় হাসপাতালে আসা রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে। অনগ্রসর এ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ এখন চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১১ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনো জনবল রয়েছে ৩১ শয্যার হিসেবেই। ফলে প্রতিদিন হাজারো রোগী এলেও সীমিত কর্মী দিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। গাইনি, মেডিসিন, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে জুনিয়র কনসালট্যান্টের মোট ১১টি পদের মধ্যে ১০টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক মাহফুজা আখতার খাতায় নাম থাকলেও শুরু থেকেই তিনি ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটে প্রেষণে কর্মরত আছেন। অন্যদিকে মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. সালেহীন কাদেরী ২০০৬ সাল থেকে এবং সহকারী সার্জন ডা. মাজেদুল ইসলাম ২০১১ সাল থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বারবার জানালেও তাদের বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৯টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, ফার্মাসিস্টসহ মোট ৪৮টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি পড়ে আছে।
চরাঞ্চলসমৃদ্ধ ফুলছড়ির সাত ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। প্রতিদিন তারা এ হাসপাতালের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা নিতে আসেন। শুধু ফুলছড়ি নয়, পার্শ্ববর্তী সাঘাটা ও সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষও এখানে চিকিৎসা নেন। কিন্তু জনবল না থাকায় অনেক সময় রোগীদের অন্যত্র পাঠাতে হয়। বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ।
উদাখালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আলহাজ কাবিল উদ্দিন বলেন, ‘গাইনি ডাক্তার না থাকায় দরিদ্র প্রসূতি মায়েরা এ হাসপাতালে আসতে চান না। সিজারের কোনো সুযোগ না থাকায় তাদের বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে। এতে খরচ বহন করতে গিয়ে তারা চরম কষ্টে পড়ছেন।’
ফুলছড়ি উপজেলার জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম-সমন্বয়ক আহসানুল হক স্বাধীন বলেন, ‘অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তারকে ঢাকায় প্রেষণে রাখা ফুলছড়ির মতো অনগ্রসর অঞ্চলের প্রতি অবহেলার শামিল। এভাবে জনবল ছাড়া হাসপাতাল চালানো যায় না।’
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রুহুল আমিন মিয়া জানান, বহির্বিভাগে মাসে গড়ে ১০ হাজার রোগী, জরুরি বিভাগে দেড় হাজার, আর আন্তঃবিভাগে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নেন। এছাড়া এনসিডি কর্নারে গড়ে ২০০ রোগী উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় সেবা দিতে গিয়ে ভোগান্তি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বহির্বিভাগে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যানালাইজার না থাকায় রোগীদের গাইবান্ধায় যেতে হয়। এতে সময় ও খরচ দুই’ই বাড়ছে। প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি পেলে অপারেশন থিয়েটার চালু করা সম্ভব।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম তানভীর রহমান বলেন, ‘গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক না থাকায় সিজারিয়ান অপারেশন চালু করা যাচ্ছে না। জনবল সংকট নিরসনে কয়েক দফা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সীমিত জনবল দিয়ে সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’
ফুলছড়ির সাধারণ মানুষ বলছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষ করে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক যোগ হলে সিজারিয়ানসহ জরুরি সেবা পুনরায় চালু হবে। দরিদ্র মানুষের ভরসাস্থল এ হাসপাতালে সেবা সচল করতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।