বিডি ঢাকা ডেস্ক
ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেছেন, দেশে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ তথা বিডিএস কার্যক্রম পুরোদমে চলছে। আগামী মাসের শেষ নাগাদ সারাদেশের নির্বাচিত এলাকায় স্যাটেলাইট, ড্রোন ও অন্যান্য ফোর্থ জেনারেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লট-টু-প্লট জরিপের মাধ্যমে বিডিএস ম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হবে। রবিবার (২১ জানুয়ারি) সাভারে অবস্থিত অফিসার্স ট্রেনিং ইন্সটিটিউট (ওটিআই) মসজিদ সংলগ্ন মাঠে যৌথ ক্যাম্পে, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর (ডিএলআরএস) কর্তৃক আয়োজিত ১৩৪ তম সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, বিডিএস বাস্তবায়িত হলে ভূমি জরিপ, ভূমি ব্যবস্থাপনা অফিসের মধ্যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠাসহ অটোমেশন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। মৌজা-ম্যাপ ও রেকর্ডের মধ্যে লিংকেজ প্রতিষ্ঠার ফলে ভূমির মালিক সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে রেকর্ড ও প্লট দেখার সুযোগ পাবে। ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বিধায় জনদুর্ভোগ কমার পাশাপাশি ও দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি হবে। বিডিএস কার্যক্রমে অনলাইনে মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান পাওয়া যাবে। ১৫ দিনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্ট দাগ সংশোধনের নকশাসহ খতিয়ান তৈরি হবে।
ভূমিমন্ত্রী বলেন, বিডিএস-এর আওতাভুক্ত ইডিএলএমএস প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা এবং ধামরাই উপজেলায় ডিজিটাল জরিপের কন্ট্রোল পয়েন্ট অর্থাৎ পিসিএসএম পিলার (পার্মানেন্ট ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে মার্ক/পাকা পিলার) স্থাপনের স্থান নির্বাচন এবং পিলার স্থাপন কাজ চলছে।
এর আগে মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে কন্ট্রোল-পয়েন্ট সিলেকশন কাজ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম ও ধামরাইয়ে স্থান নির্বাচন এ সপ্তাহে শেষ হবে। আগামী সপ্তাহে রাজশাহী এবং কুষ্টিয়ায় বিডিএস কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী মাসের শেষ নাগাদ সারা দেশের নির্বাচিত এলাকায় স্যাটেলাইট, ড্রোন ও অন্যান্য ফোর্থ জেনারেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্লট-টু-প্লট জরিপের মাধ্যমে বিডিএস ম্যাপ তৈরির কাজ শুরু হবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নাগরিককে সুষ্ঠু ভূমি সেবা দিতে এই ধরণের যৌথ প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে পারস্পরিক মতবিনিময়ের মাধ্যমে সেবা দানে নতুন কর্মকৌশল বের করা যায়। প্রশিক্ষণে জন্ম হওয়া সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক পরবর্তীতে কর্মজীবনে আন্তঃবিভাগীয় কাজে সহায়ক হয়।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার অত্যাধুনিক সার্ভে ড্রোন, এয়ারক্রাফট, জিএনএসএস, ইটিএস সহ ডিজিটাল জরিপের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে। সরাসরি কোরিয়ান কারিগরি সহায়তায় এই জরিপ চলবে।
এর আগে ভূমিমন্ত্রী সাভারে এসে পৌঁছলে ভূমিসচিব মো. খলিলুর রহমান এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ মন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষকবৃন্দ মন্ত্রীকে আধুনিক ভূমি জরিপের ডেমো প্রদর্শন করেন এবং ড্রোন, জিএনএসএস ও ইটিএস যন্ত্র সহ অত্যাধুনিক জরিপ যন্ত্র সম্পর্কে সাধারণ ধারণা দেন। অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দের এক প্রশ্নের জবাবে ভূমিমন্ত্রী জানান, মানুষের ভূমির উপর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমি কাজ করে যাব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমাদের অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে, এর ফলে কৃষিজমি, জলাভূমি, পাহাড় ও বনভূমি রক্ষাসহ জমির পরিকল্পিত ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ডিএলআরএস-এর মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ভূমি মন্ত্রণালয় ও ডিএলআরএস-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ।
এছাড়া সাভার উপজেলার স্থানীয় প্রশাসন, ভূমি প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পার্শ্ববর্তী ওটিআই ও ফিশারিজ ট্রেনিং ইন্সটিটিউট এর বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ডিএলআরএস-এর পরিচালক ও কোর্স পরিচালক মো. মোমিনুর রশীদ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।