ওস্তাদের মার সচরাচর শেষ রাতেই হয়। মিরপুরে সেটা হলো অবশ্য সন্ধ্যাবেলাতেই। ওস্তাদের চরিত্রে এখানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ফাইনালের আগে তার নামের পাশে একটি হাফ সেঞ্চুরিও ছিল না। সর্বোচ্চ রান ৪৫। খুলনার এই ‘ওস্তাদ’-ই ফাইনালে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ৭০ রানের ইনিংস। তাতে কপাল খুলল খুলনারও।প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ স্পন্সরড বাই ওয়ালটন’ এর শিরোপা জিতল জেমকন খুলনা। তারা হারাল টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল, সর্বোচ্চ রান স্কোরার ও উইকেট শিকারী থাকা দল গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে।আগে ব্যাটিং করে খুলনা ৭ উইকেটে ১৫৫ রান তোলে। জবাবে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে চট্টগ্রাম ১৫০ রানের বেশি করতে পারেনি। ৫ রানের জয়ে খুলনা শিবিরে চলছিল উৎসব, চট্টগ্রাম শিবির পুড়ছিল আক্ষেপে।হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিল চট্টগ্রামের সৈকত আলীও। লক্ষ্য তাড়ায় তার ৪১ বলে পাওয়া হাফ সেঞ্চুরিতে জয়ের লড়াইয়ে ছিল চট্টগ্রাম। কিন্তু জয়ের থেকে ১৩ রান দূরে থাকতে সৈকত ৫৩ রানে আউট হলে চট্টগ্রামের সম্ভাবনা শেষ হয়। এক্ষেত্রে খুলনার পেসার শহীদুলকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। শেষ ওভারে ৬ রান দরকার ছিল চট্টগ্রামের। ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে মোসাদ্দেক (১৯) ও সৈকতকে ফিরিয়ে খুলনা শিবিরকে উল্লাসে ভাসান ডানহাতি পেসার।শুরুটাও ভালো ছিল না তাদেরও। সৌম্য মাত্র ১২ রানে শুভাগতর বলে বোল্ড হন। মিথুন ৭ রানে আল-আমিনের বলে এলবিডব্লিউ হন। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৩৯৩ রান করা লিটন এদিন ২৩ রানে রান আউট হন। এরপর ভরসা হয়ে উঠেন সৈকত। ৪৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৫৩ রানের ইনিংস খেললেও তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। শামসুরের ২৩ ও মোসাদ্দেকের ১৯ রানে পরাজয়ের ব্যবধান কমে মাত্র।এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতে হোঁচট খেয়েছিল খুলনা। এরপর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পথ চলা। শেষটা হলো ঝড়ো। সেটা মাহমুদউল্লাহর কল্যাণে। ৪৮ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ।ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম বলেই জহুরুল আউট। আগের ম্যাচে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৮০ রান করা জহুরুল এবার রানের খাতা খোলার আগে আউট। স্পিনার নাহিদুলের হাওয়ায় ভাসানো বল লং অফ দিয়ে উড়াতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মোসাদ্দেকের হাতে ক্যাচ দেন। ইমরুল একই ফাঁদে পা দেন। ডানহাতি অফস্পিনারের বল কভার দিয়ে উড়াতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন ৮ রানে।পাওয়ার প্লে’তে জোড়া উইকেট হারিয়ে পিছিয়ে পড়া খুলনা খুব বেশি রান করতে পারেনি। ৬ ওভারে তাদের রান ৪২। পরের ওভারে জাকির সাজঘরের পথ ধরেন মোসাদ্দেককে উড়াতে গিয়ে। মিড উইকেট সীমানায় ধরা পরেন ২৫ রানে। ২০ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান এ বাঁহাতি।চতুর্থ উইকেটে আরিফুল ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে আসে ৩২ বলে ৪০ রান। তাতে বিপদ থেকে মুক্তি পায় খুলনা। এ জুটি আগ্রাসন বাড়াতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। পেসার শরীফুলের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২১ রানে। শুভাগত হোমের ১২ বলে ১৫ রানের প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংসটি শেষ হয় একই বোলারের বলে। বাঁহাতি পেসারের শর্ট বল উড়াতে গিয়ে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ দেন শুভাগত।এরপর দলের রান একাই টেনেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন। এরপর আগ্রাসন দেখিয়ে উইকেটের চারিপাশে শট খেলে দ্রুত রান তোলেন। শেষ ওভারে সৌম্যর এক ওভারেই পান ১৭ রান। তাতে দল পায় লড়াকু পুঁজি। নাহিদুল ও শরীফুল ২টি করে উইকেট নেন। মোস্তাফিজ আজও ১ উইকেট নিয়ে নিজেকে আরেকটু উপরে নিয়ে গেলেন। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে তার উইকেট ২২টি।