বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নওগাঁ জেলার বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি ও মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে তুলতে হচ্ছে ভূগর্ভের পানি। এতে ভূগর্ভের পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্যদিকে পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে নদীগুলো এবং খাল-বিলগুলো শুকিয়ে গিয়ে সারাবছর পানি থাকছে না। আবার পর্যাপ্ত বৃষ্টিও হচ্ছে না। যে কারণে পুনর্ভরণ হচ্ছে না ভূগর্ভের পানির স্তর। এর ফলে মরুকরণের হাত থেকে বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাঁচাতে ‘খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ-দিতীয় পর্যায়’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিএমডিএ সূত্রে জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলেনের পানির সমস্যা সমাধান এবং মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও বাগমারা এবং নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলাকে বরেন্দ্র অঞ্চলকে বাঁচাতে ‘খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ-দিতীয় পর্যায়’ প্রকল্প এলাকা হিসেবে নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। প্রায় নয় মাস আগে প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়েছে এবং সম্প্রতি প্রকল্পের পরিচালকও (পিডি) নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) শুরু থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে।
বিএমডিএ সূত্রে আরো জানা গেছে, ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার জন্যই বরাদ্দ থাকছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় মরা খাল, খাড়ি, পুকুর, জলাশয় খনন করা হবে এবং মহানন্দা ও পুনর্ভবা নদী থেকে পানি উত্তোলন করে বরেন্দ্র এলাকায় ওইসব মরা খাল, খাড়ি, পুকুর, জলাশয়গুলোয় রাখা হবে। সেখান থেকে সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে লো-লিফট পাম্পের মাধ্যমে সেই পানি কৃষকরা ব্যবহার করতে পারবে। এতে ভূগর্ভের পানির চাহিদা কমার পাশাপাশি ভূগর্ভের পানির স্তরও পুনর্ভরণ হবে।
সূত্রটি আরো জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার গোবরাতলা এলাকার গণির মোড় নামক স্থানে মহানন্দা নদীতে সারাবছর পানি থাকে। এছাড়া মহানন্দা নদীতে রাবারড্যাম নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা আরো বৃদ্ধি পাবে। গণির মোড় এলাকায় মহানন্দা নদীতে ১টি পন্টুন স্থাপন করে তার ওপর ৮টি পাম্প স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ৫ কিউসেক ক্ষমতার সেন্টিফিগ্যাল পাম্প দিয়ে মোট ৪০ কিউসেক পানি ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২টি এবং ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২টি মোট ৪টি ভূগর্ভস্থ ৪৫০-৫০০ মিলিমিটার ডায়া এমএস পাইপের মাধ্যমে তেঘড়িয়া-মির্জাপুর খাড়িতে পানি সরবরাহ করে সংরক্ষণ করা হবে। খালে ৩০টি সোলার পাম্প স্থাপন করে খালের উভয় পাশে পানি সেচের মাধ্যমে ৫৭০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে। এছাড়া ওই এলাকায় ৪০টি গভীর নলকূপ দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বালিপাথর নির্গত হয়ে প্যাক্টআপ হওয়ায় সেচ কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। সেন্টিফিগ্যাল পাম্প দিয়ে সরাসরি ওই এলাকায় ৬০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে। তাছাড়া ৭ কিলোমিটার তেঘড়িয়া খাল পলি পড়ে ভরাট হওয়ায় পুনঃখনন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এক ফসলি জমি তিন ফসলি জমিতে পরিণত হবে।
অন্যদিকে পুনর্ভবা নদী থেকে অনুরূপভাবে পানি উত্তোলন করে গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার মরা খাল, খাড়ি, পুকুর, জলাশয়গুলোয় রেখে সেচ কাজে ব্যবহার করা হবে।
এইসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএমডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রকল্পটি বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের জন্য অবশ্যই আশীর্বাদ বয়ে আনবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. নাজিরুল ইসলাম গতকাল রবিবার গৌড় বাংলাকে বলেন, প্রায় নয় মাস আগে প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। আশা করা হচ্ছে আগামী অর্থবছরের শুরু থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটির মেয়াদকাল পাঁচ বছর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর প্রকল্প এলাকার পানি সমস্যার সমাধান হবে, কৃষকের উৎপাদন বাড়বে, জীববৈচিত্র্য ভালো থাকবে।
প্রকল্পটির ব্যাপারে গত কয়েকদিন আগে কথা প্রসঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেছেন, প্রকল্পটি বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ হবে।