নিউজ ডেস্ক : ভারত শুধু আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রই নয়, ভারতের সঙ্গে আমাদের রয়েছে ঐতিহাসিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যগত এবং ভৌগোলিক সেতুবন্ধ। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের সঙ্গে ভারতের সরকার এবং সেদেশের জনগণ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাজধানী জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন। এ সময় মঞ্চে তাঁর পাশে বসে ছিলেন অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য করেছিল। বাংলাদেশ-ভারত মিত্র বাহিনীর যৌথ অভিযানের মধ্য দিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতের শহীদ সেনাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের জনগণের যে আত্মত্যাগ, সাহায্য-সহযোগিতা তা কখনও ভুলবার নয়। আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে সে অবদানের কথা স্মরণ করি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা এ সময় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং তার পরবর্তী দু:সময়ে ভারতের ভূমিকা স্মরণ করে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের জনগণ এবং সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমরা দুই বোন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যাই। আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দিলে আমরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ি। আমার পরিবার এবং আমার ছোটবোন শেখ রেহানাকে ভারত সরকার আশ্রয় দেয়।’
গত ১৭ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আজ শেষ দিন। এসব অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান অংশ নিয়েছেন। শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছ থেকেও।
বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে উভয় দেশ বেশকিছু যৌথ কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া, এ উপমহাদেশের দুই বরণীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে ভারত সরকার বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছে। এ বছরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মর্যাদাশীল ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কার-২০২০’- এ ভূষিত করেছে ভারত।
‘রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ার ডাক’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আসুন প্রতিজ্ঞা করি, সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা আমাদের জনগণের মঙ্গলের জন্য কাজ করব। দক্ষিণ এশিয়াকে উন্নত-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ দেশ। একটি স্থিতিশীল এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ে তুলতে হলে ভারতকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা যদি পরস্পরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জনগণের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী।’
ভারতের সঙ্গে বর্তমানে আমাদের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদিজির ‘প্রতিবেশী সর্বাগ্রে’ নীতির প্রশংসা করি। বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে করোনাভাইরাসের টিকা পাঠানোর মাধ্যমে মোদিজির এই নীতিরই প্রতিফলন ঘটেছে। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে ব্যবসায়-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত আমাদের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার।’
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য সম্প্রতি ফেনী নদীর উপর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলি এখন চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এবং চট্টগ্রাম বিমান বন্দর ব্যবহার করতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী ছিলেন। বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি তিনি স্বপ্ন দেখতেন অর্থনৈতিক মুক্তির। এজন্য পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা এবং সমতার ভিত্তিতে সহযোগিতার ওপর তিনি জোর দিতেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নানা প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছি। বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চমধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি।’