অনলাইন নিউজ : মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে আগামী মার্চে দেশটি সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দুবাই সফর করবেন। এই সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল বিষয়ে আলোচনা হবে, যার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রাধান্য পাবে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি দুবাই সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। কেন না সবকিছু নির্ভর করছে কোভিডের ওপর। আমি এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত, তবে আমার কোনো শারীরিক সমস্যা হচ্ছে না, এর মধ্যে যদি করোনা নেগেটিভ হয়ে যাই তবে সফরটি হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আসন্ন সফরের মূল ফোকাস থাকবে বাণিজ্য-বিনিয়োগে। দুবাই এক্সপো ২০২০-তে আমরা স্টল নিয়েছি, এটার উদ্বোধন হবে। তারপর প্রধানমন্ত্রীর দুবাই সফর চূড়ান্ত করা হবে। দুবাইতে আমাদের অনেকগুলো প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন, সেগুলো ফাইনালাইজ করা এই সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য। যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে আমাদের ক্যামিকেল ইস্যুতে একটি প্রকল্প আছে, যা তারা সেটআপ করবে, সেটার বিষয় এগিয়ে নেওয়া।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে আমিরাতের বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে, এজন্য আমরা জায়গা-জমিও ঠিক করে রেখেছি কিন্তু এখনও শুরু হয়নি। এই সফরে এই ইস্যুটাও তরান্বিত করতে কাজ করব।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেখানে ব্রিটিশ প্রিন্সও আসবেন, তার সাথেও সাক্ষাতের সম্ভাবণা রয়েছে, এমন ভালো ভালো কিছু কাজের উদ্দেশ্যে সফরটি হবে।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন মার্চে প্রধানমন্ত্রীর আমিরাত সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো। এজন্য ওই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে এফবিসিসিআই (বাংলাদেশ শিল্প ও বনিক সমিতি) এর একটি প্রতিনিধিদল থাকবে। তার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুবাই সফর করে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সকল প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে দুবাইতে এফবিসিসিআই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শিল্প ও বনিক সমিতি’র (এফসিসিআই) মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আসন্ন মার্চের সফরকে সামনে রেখে ইউএই-তে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর গত ২২ জানুয়ারি এফসিসিআই’র মহাসচিব হুমাইদ মোহাম্মদ বিন সালেমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে বাংলাদেশে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগে পারস্পরিক স্বার্থের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। রাষ্ট্রদূত কৃষি, তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া শিল্প, এসএমই সেক্টর এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন এবং আরও বাংলাদেশি পণ্য আমদানির পাশাপাশি বিভিন্ন সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের জন্য আমিরাতের প্রতি অনুরোধ জানান। ওই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বাঁচাতে ঢাকা-দুবাই সরাসরি বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের ওপর গুরুত্ব দেন রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবু জাফর।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে শিপিং সংযোগ স্থাপন করা হলে পণ্য পরিবহনের সময় ও খরচ কমিয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করবে। এছাড়া রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশ থেকে কৃষি পণ্যের একটি টেকসই সরবরাহ চেইন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমিরাতের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জানান।
দুবাই এফসিসিআইয়ের মহাসচিব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ ও আমিরাতের মধ্যে রাজনৈতিক স্তরে এবং জনগণের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। তিনি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সেক্টরে উভয় প্রান্তের ব্যবসায়ীদের অর্থপূর্ণ সম্পৃক্ততার উপর জোর দেন।
তিনি বলেন, আমিরাত নিজেকে মিনা অঞ্চল এবং এর বাহিরে একটি ট্রেডিং হাব ও গেটওয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশ চাইলে আমিরাতের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য সহজেই এসব বাজারে পৌঁছাতে পারে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, ঢাকা-আমিরাত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এক হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা। মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটিতে কমবেশি সাত লাখ বাংলাদেশি রয়েছে, যার মধ্যে ৫০ হাজার বাংলাদেশি সেখানে ব্যবসা করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..