বিডি ঢাকা ডেস্ক
হঠাৎ করেই ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে শেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চল। বর্তমানে পাহাড়ি সব নদীর পানি কমতে শুরু করলেও সদর এবং নকলা উপজেলায় পানি ধীরগতিতে নামছে। আর বন্যায় তলিয়ে গেছে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। আর এতেই যেন কপাল পুড়েছে এসব অঞ্চলের কৃষকদের।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছেন, অসহায় কৃষক যেন চিন্তায় একেবারে দিশেহারা। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেয়া এবং তাদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আকস্মিক এ বন্যায় নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদীর অধিকাংশ জমি পানিতে ডুবে যায়। আবার সদর উপজেলা ও নকলা উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নেও আবাদি জমি এখনো পানির নীচে। পাঁচ উপজেলায় পায় দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তবে ভারী বৃষ্টি না থাকায় এখন কিছুটা উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই ঋণ করে আগাম জাতের সবজির আবাদ করেছিলেন, ধান রোপণ করেছিলেন। ফসল নষ্ট হওয়ায় ঋণগ্রস্ত কৃষকেরা পড়েছেন সবচেয়ে বিপাকে। প্রান্তিক পর্যায়ের অনেক কৃষক ধানের ওপর নির্ভরশীল থাকলেও এবার একেবারেই নিঃস্ব হয়েছেন তারা।
ঝিনাইগাতীর মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের ঝুলগাও গ্রামের আনোয়ার মিয়া বলেন, আমি সংসারে একাই রোজগার করি। ধারদেনা করে এক একর জমিতে ধান আবাদ করেছিলাম। সব ডুবে পঁচে গেছে। এখন ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবো আর সংসার কিভাবে চালাবো?
একই চিত্র ৫ উপজেলার হাজার হাজার কৃষকের। উপরওয়ালাই তাদের একমাত্র ভরসা ।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার ৪৭ হাজার হেক্টর আবাদি জমির আমন ধান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ হাজার হেক্টর জমির সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়ে ৫০ হাজার হেক্টর হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
এ বিষয়ে জেলা খামারবাড়ির উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চলতি আমন আবাদের সাড়ে ৯৩ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমির আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবজি আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার হেক্টর। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে পাঁচশ কোটি টাকা। বন্যার পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নিরূপণ সম্ভব হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে তাদের সার-বীজ দেওয়া হবে।
এছাড়া কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানানো হবে।