বিডি ঢাকা ডেস্ক
মাদারগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা অবৈধ বালুমহাল দখলে নিয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। বিএনপি দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট থেকে বিরত থাকতে নেতা-কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিলেও তা কাজে আসছে না।
জানা গেছে, জামালপুর বগুড়ার সীমান্ত ঘেঁষা যমুনা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিপণনের মৎসব চালু করেন সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লা, মাদারগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মির্জা গোলাম মাওলা সোহেলসহ তার দলের নেতা-কর্মীরা। পরে গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ ত্যাগের পর তা দখলে নেন সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইসহাক প্রামাণিক, সাধারণ সম্পাদক মুহিদুল ও তার লোকজন। আরও জানা গেছে, অবৈধ বালুমহালের বালু বিক্রির টাকা তোলার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক রিপন ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাসেমকে। হাসেম বিএনপির সভাপতি ইসাহাক প্রামাণিকের ভাই এবং রিপন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা মুহিদুলের ভাতিজা।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দিনরাত অবৈধভাবে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের পর টেক দিয়ে জমানো বালু বিক্রি করে নিজেদের পকেট ভারি করছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইসহাক প্রামাণিক ও সম্পাদক মুহিদুলসহ কয়েকজন দলীয় নেতা-কর্মী। আর এই বালু এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে ড্রামট্রাক, মাহিন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাচ্ছে জামালপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে। এতে করে বেহালদশার সৃষ্টি হচ্ছে সড়কে, অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। নষ্ট হচ্ছে উর্বর ফসলি জমি।
স্থানীয় একজন জানান, আগে আওয়ামী লীগ বালু বেচত। এখন দুই দলের নেতাকর্মীরাই মিলেমিশে বেচে। এই যে বালুগুলো দেখছেন এই বালু আগে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান মোল্লার ছিল। এখন বিএনপি দখলে নিেেয়ছে। শাহজাহান মোল্লাও গোপনে আছেন বলে শুনেছি। কথা হলে স্থানীয় কৃষকরা বলেন, আমাদের আবাদি জমি জোর করে দখলে নিয়ে নামমাত্র ভাড়া দিয়ে তাতে বালুর টেক দেওয়া হয়। বিশ থেকে ত্রিশ ফুট উঁচু করে বালু রাখায় উর্বর ফসলি জমি নষ্ট করে ফেলেছে। আমাদের ক্ষতি হলেও দেখার কেউ নেই।
বালু বিক্রির বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইসহাক প্রামাণিক বলেন, মাদারগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা সোহেলের বালু ছিল। আমরা তার কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। তবে শাহজাহান মোল্লার বালির বিষয়ে কিছু জানি না। শুনেছি তার ভাতিজা সোহেল মোল্লা এখন বিক্রি করে। অন্যদিকে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুহিদুল বলেন, কোনো বালুর ব্যাবসা করি না। আমার নামে বালুমহাল ইজারা আছে। ইজারা চুক্তি থাকার পরও আওয়ামী লীগের আমলে আমাকে ব্যবসা করতে দেওয়া হয়নি। তার এমন বক্তব্যে সরজমিন ঘুরে জানা যায়, মুহিদুল বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে এই ব্যবসা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
বিএনপির এই নেতা সারিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক থাকার সময় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দল থেকে অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তবে পুনরায় স্বপদে বহাল আছেন তিনি। কাজলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মোল্লার ভাতিজা সোহেল মোল্লা বলেন, আমার চাচার বালু ছিল। ৫ আগস্টের পর চাচা আত্মগোপনে যাওয়ার পর সব দখলে নিয়েছে বিএনপির লোকজন। আপনি খোঁজ নেন এলাকায় কে কে বালু বিক্রি করে টাকা নেন তাহলেই প্রমাণ পাবেন। তিনি আরও বলেন, বালু পয়েন্টের পাশে গিয়ে দেখেন একটি টিনের ঘর আছে সেখানে বালু বিক্রির টাকা নেওয়া হয়। অভিযোগ প্রসঙ্গে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, দলের ওপর মহল থেকে নেতা-কর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া আছে। যদি কেউ দলের পদে থেকে বা দলের নাম ভাঙিয়ে দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।