বিডি ঢাকা ডেস্ক
সরকারের বিদ্যমান সার নীতিমালা বহাল রাখাসহ ৮ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন-বিএফএ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিট।
সোমবার স্কাই ভিউ ইন হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএফএ জেলা ইউনিটের সভাপতি আকবর হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে দাবিগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন— আমরা কিছু দিন থেকে লক্ষ করছি, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও গত ২৫ সেপ্টেম্বর কৃষি উপদেষ্টা মহোদয় সংবাদ সম্মেলনে সব ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০২৫ প্রণয়ন হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এটাকে আমরা যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছি। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ইউনিয়নভিত্তিক ৩ জন করে সার ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে ওয়ার্ড পর্যায়ে ডিলার নিয়োগের যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে তা বিতরণ ব্যবস্থায় কখনো সুফল বয়ে আনবে না।
আকবর হোসেন বলেন— দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ বিসিআইসি সার ডিলারগণ সুনামের সঙ্গে কৃষক পর্যায়ে সার ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ও নিরবচ্ছিন্ন সেবাদানের মাধ্যমে কৃষকের ফসল উৎপাদনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। এ কথা অনিবার্য যে, এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তদারকি রয়েছে। হঠাৎ করে কি এমন হলো যে, ওয়ার্ড পর্যায়ে ডিলার নিয়োগ দিতে হবে। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় আবেদন করছি।
তিনি বলেন— খুচরা সার বিক্রেতা থাকবে না বলে বলা হয়েছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব হবে তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। কেননা এদের সংখ্যা অনেক এবং তাদের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা বিভিন্ন রকম সুবিধা পেয়ে থাকে। এরা বিলুপ্ত হলে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে। এ ব্যাপারে আমরা মনে করি, কৃষক পর্যায়ে সারের প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে বরাদ্দ প্রদান করলে সংকটের কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আমাদের দাবি, ইউনিয়ন পর্যায়ে সুষম বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। একজন ডিলার নিজের সব মোকামে গিয়ে সার উত্তোলন করে ইউনিয়ন পর্যায়ে নিয়ে এসে কৃষকের মধ্যে সার সঠিক সময়ে ও সুষ্ঠুভাবে বিতরণ সম্ভব নয়। অবশ্যই মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে সার উত্তোলন ও বিতরণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
তিনি বলেন— ডিলারদের পরিবহন খরচ ও কমিশন বৃদ্ধি করতে হবে। জ্বালানি তেলের দাম কয়েক দফা বৃদ্ধি পাওয়ার পরও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি হয়নি তা ছাড়াও পূর্বে ব্যাংক সুদ সিঙ্গেল ডিজিট থাকলেও বর্তমানে ডাবল ডিজিট হয়েছে। এছাড়াও গুদাম ঘর ভাড়া, কর্মচারী ব্যয়, লোড-আনলোডসহ আনুষাঙ্গিক যাবতীয় খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও বিক্রয় কমিশন বৃদ্ধি হয়নি। আমরা কমিশন বৃদ্ধির জন্য আবেদন জানাচ্ছি। সরকার কর্তৃক ভর্তুকি মূল্যে কৃষক পর্যায়ে সার বিক্রয় করা হয়। এ ধরনের সারের ওপর কোনোভাবেই ৫ শতাংশ উৎস কর নির্ধারণ করা যাবে না। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে। অন্যথায় সারের বাজার অস্থীতিশীল হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সারের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।
আকবর হোসেন বলেন— সারের যে কোনো নীতিমালা করার আগে মাঠপর্যায়ে অবশ্যই প্রতিটি জেলা/উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের ও বিএফএ’র প্রতিনিধিদের মতামত নেয়ার ব্যবস্থ্য গ্রহণ করতে হবে। আমরা বলতে চাই, আমরা বিসিআইসি ও বিএডিসি কোনো বিভাজনে না গিয়ে সরকারের নীতিমালার আলোকে সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে সার বিতরণের প্রক্রিয়া কার্যকর হোক। এক্ষেত্রে আমরা মনে করি, ডিলার নীতিমালা-২০০৯ এর আলোকে সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২৫ এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যেতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএফএ’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম, সিনিয়র সহসভাপতি কাজী সেতাউর রহমান, সহসভাপতি দানিউল ইসরাম ও মোহাম্মদ আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ অন্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।