ইজরায়েল এবং প্যালেস্টাইনপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজ়া ভূখণ্ডে মৃত প্যালেস্টাইনিদের সংখ্যা ৫০ হাজার পার করেছে। যুদ্ধে ধ্বস্ত গাজায় এখন শুধুই বোমার শব্দ এবং পোড়া বারুদের গন্ধ। সাময়িক যুদ্ধবিরতির পরে আবার নতুন করে সংঘাতে জড়িয়েছে হামাস এবং ইজরায়েল। শনিবার রাত থেকে ইজরায়েলি হানায় অন্তত ২৬ জন প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে এক হামাস নেতা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন গাজায় বসবাসকারী নারী এবং শিশুও। নতুন করে হামলা শুরুর পরে গাজার রাফাহ্ শহরের একটি অংশ ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য প্যালেস্টাইনিদের নির্দেশ দিয়েছে ইজরায়েলি বাহিনী।
গাজায় নতুন করে এই সংঘাতের জন্য আমেরিকা দায়ী করছে হামাসকেই। আমেরিকা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ইজরায়েলের সঙ্গেই রয়েছে। গাজায় নতুন করে সংঘাতের জন্য হামাস শিবিরকেই দায়ী করছে তারা। এর অন্যতম কারণ হিসাবে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি না-হওয়াকেই দায়ী করছে আমেরিকা। বস্তুত, গত ১৫ জানুয়ারি কাতার, আমেরিকা এবং মিশরের উদ্যোগে ইজরায়েল এবং হামাস সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তা কার্যকর হয়। প্রথম দফার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ফুরিয়েছে ১ মার্চ। দ্বিতীয় দফার যুদ্ধবিরতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও আলোচনা হয়নি দুই পক্ষের। ইজরায়েল চাইছিল যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হোক। তার জন্য হামাস গোষ্ঠীর উপর চাপ বৃদ্ধি করে যাচ্ছিল তারা। কখনও গাজায় ত্রাণ পাঠানো বন্ধ করেছে, কখনও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করেছে। তার পর গত সপ্তাহ থেকে হামাস গোষ্ঠীকে কিছুটা চমকে দিয়েই নতুন করে গাজায় হামলা শুরু করে ইজরায়েল।
প্রায় দু’মাস শান্ত থাকার পরে গাজায় ফের গোলাবর্ষণ শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, নতুন করে এই হামলায় বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। ইজরায়েল নতুন করে হামলা শুরুর প্রথম ৪৮ ঘণ্টায় হামাস গোষ্ঠীর পাল্টা আক্রমণ দেখা যায়নি। তার পর থেকে পাল্টা হামলা শুরু করেছে হামাস শিবিরও। তারাও ইজরায়েলের দিকে রকেট বর্ষণ শুরু করেছে। ইজরায়েলি হানায় গত কয়েক দিনে শয়ে শয়ে সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। এ দিকে ইজরায়েলি বাহিনীর দাবি অনুসারে, সেখানে মাত্র কয়েক ডজন বিদ্রোহীকে তারা নিকেশ করেছে। আমেরিকা আগেই জানিয়েছিল, গাজায় নতুন করে হামলা শুরুর আগে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছিল ইজরায়েল।
এই আবহে শনিবার রাতে ইজরায়েলের মন্ত্রিসভা একটি নতুন দফতর তৈরির প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়। যে প্যালেস্টাইনিরা স্বেচ্ছায় গাজা ছাড়তে ইচ্ছুক, তাঁদের সেখান থেকে বার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য এই দফতরটি মূলত কাজ করবে। কিন্তু প্যালেস্টাইনিরা নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে যেতে চাইছেন না। এরই মধ্যে হামাস গোষ্ঠী এবং ইজরায়েল একে অপরের দিকে হামলাও চালিয়ে যাচ্ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ রবিবার জানান, নতুন করে এই সংঘাতের জন্য হামাস গোষ্ঠীই দায়ী। তাঁর দাবি একটি ‘গ্রহণযোগ্য চুক্তি’ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছিল হামাস শিবির। ফলে এখন বিষয়টি হামাসের উপরেই রয়েছে বলে জানান উইটকফ। আমেরিকান সংবাদমাধ্যম ‘ফক্স নিউজ’কে তিনি জানান, আমেরিকা ইজরায়েলের পাশেই রয়েছে।