বিডি ঢাকা ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে পরবর্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ভাষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষার প্রতি আমাদের মমত্ববোধ থাকতে হবে। শুক্রবার বিকেলে শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন-মা মাটি মাতৃভাষা এই তিনটি জিনিসের ওপর যখন আঘাত আসে তখন কেউ আর ঘরে থাকতে পারে না। মানুষের অধিকারের প্রতি যদি আঘাত আসে তা হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবেই। যেটা ৫২তে হয়েছে, ৭১ এ হয়েছে, ৭৫ এ হয়েছে, ৯০ এ হয়েছে এবং সর্বশেষ ২৪য়েও হয়েছে। ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান বা বিপ্লবের যে চেতনা সেই চেতনা আমাদের ধারণ করতে হবে এবং বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে আমাদের এক সাথে কাজ করতে হবে।
আব্দুস সামাদ বলেন-ভাষার ওপরে সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন চরমভাবে আসছে। আমরা এক সময় ভারতীয় বাংলা কিংবা হিন্দি চ্যানেলে মোহাচ্ছন্ন হয়ে আকৃষ্ট হচ্ছিলাম, এখন আসতে আসতে এই প্রবণতা কমে আসছে। তিনি বলেন-আমাদের দেশীয় যে সংস্কৃতি এবং আমাদের নিজস্ব যে ভাষা, যে ভাষার জন্য এতো আন্দোলন হয়েছে, যে টা বিশ্বের আর কোথাও হয় নি, সেটার প্রতি আমাদের মমত্ববোধ থাকতে হবে। তিনি বলেন-এই বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের মানুষই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু কুরুচিপূর্ণ বাংলা দেখলে আমাদেরই বিরক্ত লাগে লজ্জা লাগে বলে উল্লেখ করেন জেলা প্রশাসক। তিনি তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই ৫২ এর ভাষান্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ২৪ এর আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন।
পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবুল কালাম সাহিদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল আলম, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফাজ উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাকিব হাসান তরফদার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বিপ্লব কুমার মজুমদার, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলা বিভাগের প্রধান মো. গোলাম মোস্তফা, জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা, জেল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রাহিম।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাকিব হাসান তরফদার বলেন-বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের ভাষা দিয়েই সকল কাজ সম্পন্ন করছে। আমাদেরও সেই চেষ্টা করা যেতে পারে।
সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বিপ্লব কুমার মজুমদার বলেন-বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তির কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে। আজকাল প্রযুক্তির সুবাদে ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষা গুগোল অনুবাদ হচ্ছে-কিন্তু বাক্যের সঠিক প্রয়োগ থাকছেনা।
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলা বিভাগের প্রধান মো. গোলাম মোস্তফা বলেন-ভাষা ব্যবহারে আঞ্চলিকতা থাকবে তবে অফিস আদালতে প্রমিত বাংলা ব্যবহার করতে হবে।
আলোচনা শেষে দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতার বিজয়িদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।