শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

মধুপুরকে হার মানাল শেরপুর, আনারস চাষে ভাগ্য ফিরছে কৃষকের

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৫ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

 

শেরপুরের গারো পাহাড়ে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে আনারস চাষ। জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু আনারস।

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং বন্য হাতির আক্রমণ রোধ করা গেলে মধুপুরের পর গারো পাহাড়ের হাজার হাজার হেক্টর পতিত জমি আনারস চাষের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। এতে পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরাও পেতে পারেন আর্থিক সচ্ছলতা—এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

শেরপুরের এই তিন উপজেলার ৪০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত গারো পাহাড়ে আগে কেবল কাসাভা আলু ছাড়া আর কোনও ফসল চাষ হতো না বললেই চলে। তবে বাজারে কাসাভার চাহিদা কম এবং লাভজনক না হওয়ায় অধিকাংশ জমি অনাবাদিই পড়ে থাকত। ফলে এখানকার কৃষকদের জীবন ছিল অভাব-অনটনে জর্জরিত। পাহাড় থেকে লাকড়ি কাটা, পাথর ভাঙা বা বালু তোলার মতো কষ্টকর শ্রমিকের কাজেই চলত জীবিকা। কিন্তু এখন পাহাড়ি কৃষকরা নতুন ফসল উৎপাদন করে এনেছেন কৃষিতে বিপ্লব, যার ফলে সংসার জীবনে ফিরেছে সচ্ছলতা।

ঝিনাইগাতী উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের আদিবাসী কৃষক জমশন ম্রং চার বছর আগে ১৮ বিঘা পাহাড়ি জমি লিজ নিয়ে আনারস চাষ শুরু করেন। হাতির আক্রমণে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হলেও তিনি ১৬ লাখ টাকার আনারস বিক্রি করেন। তাঁর সফলতা দেখে আরও অনেকেই আনারস চাষে আগ্রহী হন। ফলে বর্তমানে ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় আনারস চাষ বিস্তৃত হচ্ছে দ্রুত।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাকাকুড়া এলাকায় ১৮ বিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছেন কৃষক আশরাফুল আলম। গজনী অবকাশ পর্যটন কেন্দ্রের পাশে ৩ বিঘা করে জমিতে আনারস চাষ করেছেন জমশন ম্রং ও রিথাওই ম্রং। আনারস গাছে ইতোমধ্যে কলি এসেছে। ফসল রক্ষা করতে চারপাশে সোলার ফেন্সিং ও বায়ু ফেন্সিং দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। চাষিরা আশা করছেন ফেব্রুয়ারিতে পাকা আনারস বিক্রি করতে পারবেন।

এখানে চাষ হচ্ছে ‘জলডুবি’ জাতের আনারস, যা রসে ভরপুর ও মধুপুরের আনারসের চেয়ে অধিক মিষ্টি। কৃষকরা জানান, প্রথমবার মধুপুর ও রাঙামাটি থেকে চারা সংগ্রহ করলেও এখন নিজেরাই চারা উৎপাদন করছেন। চাষে আগ্রহী কেউ চাইলে তারা চারা সরবরাহসহ সকল সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

আনারস চাষে খরচ এবং লাভের বিষয়ে চাষি জমশন ম্রং জানান, গজনী অবকাশ এলাকায় ৩ বিঘা জমিতে আনারস চাষে তার ব্যয় হয়েছে এক লাখ টাকা, এবং লাভ হবে প্রায় তিন লাখ টাকা। অন্যদিকে, আশরাফুল আলম জানান, পশ্চিম বাকাকুড়া এলাকায় ১৮ বিঘা জমিতে তিনি দেড় লাখ আনারস চাষ করছেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমবার মধুপুর ও রাঙামাটি থেকে চারা এনেছিলাম, এখন নিজেই উৎপাদন করছি। আনারস খুবই সুস্বাদু, লাভজনক এবং হাতির আক্রমণ রোধ করা গেলে আরও ভালো ফলন ও মুনাফা আশা করছি।’

আনারস চাষ করছেন এমন আরেকজন কৃষক সুব্রত বলেন, ‘দুই বছর ধরে জলডুবি জাতের আনারস চাষ করছি। গতবার ভালো ফলন পেয়েছিলাম, এবারও সেই প্রত্যাশাই করছি।’

আনারসের জমিতে পরিচর্যার কাজে অনেকেই আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান স্থানীয় শ্রমিক মো. বিজয় ও সবুর আলী।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর মাটি ও আবহাওয়া আনারস চাষের জন্য উপযোগী। ঝিনাইগাতীর সফলতা দেখে অন্যান্য উপজেলাতেও চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের জেলাতেও বিক্রি করা যাবে এবং কৃষকরা লাভবান হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি সহায়তা ও হাতির আক্রমণ রোধ করতে পারলে বিশাল পাহাড়ি অঞ্চলে আনারস চাষ ছড়িয়ে পড়বে। এতে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আসবে এবং কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন।’

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com