সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৪৮ অপরাহ্ন

মহাসড়কে গরুরহাট, দুর্ভোগ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৬ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

জামালপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী হাট সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা গোপালগঞ্জহাট। হাটটি জেলা ও পার্শ্ববর্তী শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ ময়মনসিংহ বিভাগের বৃহৎ গরুরহাট হিসেবেই পরিচিত। যার ফলে কয়েক  জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরকারি রাজস্ব আসে এ হাট থেকেই। বিপুল পরিমাণ রাজস্বের এ আনন্দও প্রতি সপ্তাহে বিষাদে পরিণত হয় স্থানীয়দের। জানা যায়, উপজেলার এ গোহাটটি প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার বসে। জল ও স্থল উভয় পথ থাকায় পশু নিয়ে  অনায়াসেই এ হাটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। প্রতিহাটে কোটি কোটি টাকার কেনা-বেচা হয়। প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসন কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে এ গরুরহাট থেকে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বাংলা ১৪৩০ সালে প্রশাসন ৮৮ লাখ ৫৭ হাজার ২৪ টাকা চাহিদা মূল্যে দরপত্র আহ্বান করেন পরবর্তীতে তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান এর  প্রতিনিধি সাখাওয়াত আলম মুকুল সেটি ৮৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নেয়। পরবর্তীতে ১৪৩১ সালে এটি বেড়ে ১ কোটি ১২ লাখ ২৫ হাজার ৬৯০ টাকা চাহিদা মূল্যে দরপত্র আহ্বান করে প্রশাসন। সেখানেও তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রশিদ এর কর্মী পিংনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বাবু ১ কোটি ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ইজারা নেয়। যার সঙ্গে ভ্যাট ১৫ ভাগ ও আয়কর ১০ ভাগ যোগ হয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা রাজস্ব পায় প্রশাসন।

আর যদি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত উন্মুক্ত দরপত্র বিক্রি হয় তা হলে হাটটির মূল্য বেড়ে তিন থেকে চার কোটি টাকারও বেশি হতে পারে বলে দাবি সচেতন মহলের। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এ হাট থেকে বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আসলেও গোহাট বসার নিজস্ব কোনো সরকারি জায়গা নেই। শুধুমাত্র পিংনা রসপাল বড় জামে মসজিদের প্রায় দেড় একর আর তারাকান্দি-ভূঞাপুর মহাসড়কের ওপর বসে হাটটি। ফলে দুই মিনিটের রাস্তা হাজার হাজার পশু ও মানুষকে ঠেলে পার হতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। সম্মুখীন হতে হয় নানা সমস্যায়। এমন চরম জনদুর্ভোগে যেন প্রশাসনের কোনো কর্ণপাত নেই।

মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী মহাসড়ের ওপর সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ রেখার মধ্যে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ, হাট-বাজার বসানো বা  ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মহাসড়কের কোনো অংশ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। আইন অমান্য করলে রয়েছে শাস্তির বিধান। অথচ এ জনদুর্ভোগ নিয়মিত হলেও দায়ভার কে নেবে প্রশ্ন সচেতন মহলের। আরও জানা যায়, যেটুকু সরকারি জায়গা ছিল তার অধিকাংশ জায়গা কিছু অসাধু ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিয়মবহির্ভূতভাবে কালো টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়ে আবারও উচ্চ মূল্যে হস্তান্তর করা হয়েছে।

যার বেশিরভাগ জায়গায় নিয়মবহির্ভূতভাবে পাকা-আধা পাকা ও ভিটা পাকা ঘর নির্মাণ করে ব্যবসায়ীক কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। অবশিষ্ট যেটুকু জায়গা রয়েছে সেটিও সবজি বাজারসহ বিভিন্ন পণ্যের বাজার বসায় সঙ্কুলান হচ্ছে না।

এ বিষয়ে পিংনা রসপাল বড় জামে মসজিদের সভাপতি আবু সামা বলেন, গোহাটের কোনো জায়গা না থাকায় আমাদের মসজিদের প্রায় দেড় একর  জায়গা প্রতি বছর ভাড়া দিয়ে থাকি। এবারও ১ লাখ ৬৫ হাজার  টাকার বিনিময়ে ভাড়া দিয়েছি। যেখানেই প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার গোহাট বসে। হাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি, নাজমুল ইসলাম নাইজু বলেন, আমাদের গোহাট বসার জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে পিংনা রসপাল বড় জামে মসজিদের জায়গা ভাড়া নিয়েছি। সেখানে জায়গা কম হওয়ার ফলেই মহাসড়কের ওপর গরু ধরে রাখে ব্যবসায়ীরা। এর সমাধান আমরাও চাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, হাটের জন্য নির্ধারিত জায়গা থাকলে প্রধান সড়কে হাট বসার কথা না। হাট কমিটির সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানবো। হাটের নির্ধারিত জায়গা থাকলে, সেগুলো কী অবস্থায় আছে তা ভূমি অফিসের সহায়তায় খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে সরকারি জমি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার,  নিয়মবহির্ভূতভাবে পত্তন বাতিল, পত্তনের নিয়ম ভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ মহাসড়ক থেকে জনদুর্ভোগ নিরসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের নিকট দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল ও দুর্ভোগের শিকার জনসাধরণ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com