বিডি ঢাকা ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিশুর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষয়ক জেলাপর্যায়ের পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ‘শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামুলক প্রচার কার্যক্রম’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় জেলা তথ্য অফিস এই সভার আয়োজন করে।
ইউনিসেফ-বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় আয়োজিত সভাটি জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও বলেন, “একজন শিশু যখন দেশের মধ্যে জন্মগ্রহণ করে তখন সে দেশের সম্পদে পরিণত হয়। তার ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব তখন রাষ্ট্রের হয়ে যায়। এই শিশুদের নির্যাতন ও বাল্যবিয়ের কারণে দেশের মুখ যেন মলিন না হয়।” তিনি বলেন, “শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব হবে না। আইন মানতে হবে।” তিনি বলেন- “মাথা যার, ব্যথা তার। অর্থাৎ যার সন্তান, তাকেই বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। আর আমরা যারা বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করছি তাদেরকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যেতে হবে।” বাল্যবিয়ে মুক্ত একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাহমুদুর রশিদ বলেন- বাল্যবিয়ের কারণে একজন কিশোরী যখন মা হন এবং সেই মায়ের যখন স্বাভাবিকভাবে বাচ্চা প্রসব করানো হয় তখন অনেক সময় সেই মায়ের প্র¯্রাব ও পায়খানার পথ একীভূত হয়ে যায়। ফিস্টুলা রোগ হয়। ফলে সেই মায়ের অনবরত প্রস্রাব-পায়খানা হতে থাকে। এর ফলে তার শরীর দিয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। এতে তার স্বামীসহ শ^শুরবাড়ির লোকেরা বিরক্ত হয় এবং একটা সময় সেই কিশোরী মাকে তালাক দিয়ে দেয়। একটি ঘটনার উল্লেখ করে তিনি বলেন- এমনই এক কিশোরী মাকে তালাক দেয়ায় তিনি বাপের বাড়ি চলে আসেন। কিন্তু সেখানে তার ঠাঁই হয়েছে গোয়ালঘরের এক কোণায়। কী অমানবিক!, বলেন সিভিল সার্জন।
পরামর্শ সভায় ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন রাজশাহী পিআইডির উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. তৌহিদুজ্জামান। ধারণাপত্রে তিনি জানান, এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ে হয় বাংলাদেশে এবং বিশে^ আমাদের অবস্থান সপ্তম। আর দেশের মধ্যে পিরোজপুরের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাল্যবিয়ে হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এখানে বাল্যবিয়ের হার ৬৫ শতাংশ। এসময় তিনি বাল্যবিয়ের ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জনসংখ্যা, অর্থনীতি, আইনশৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন খাতের সমস্যা তুলে ধরেন এবং বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন।
জেলা তথ্য অফিসার রূপ কুমার বর্মণের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবুল কালাম সাহিদ।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন- জেলা মহিলা বিষয়ক অধিপ্তরের উপপরিচালক সাহিদা আখতার, জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মিজানুর রহমান, রেডিও মহানন্দার টেকনিক্যাল অফিসার রেজাউল করিমসহ অন্যরা।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচারণা বাড়ানো, জন্মনিবন্ধনে বয়স পরিবর্তন রোধ, জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি বাড়ানো, সরকারি প্রণোদনার ব্যবস্থাসহ বিবিধ সুপারিশ পেশ করেন।
অনুষ্ঠানে সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি, ইমাম, পুরোহিত এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।