বিডি ঢাকা ডেস্ক
গণশুনানী ও প্রচারণা ছাড়াই গণবিরোধী প্রিপেইড মিটার সংযোগের বিরুদ্ধে রংপুরে মানববন্ধন হয়েছে। মানববন্ধনে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সংযোগ দেয়া প্রিপেইড মিটার খুলে পুরাতন মিটার স্থাপনের হুশিয়ারী দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ডিসেম্বর) দুপুর ১১ টায় নগরীর শাপলা চত্তরে ঘন্টাব্যাপী মানবন্ধনের আয়োজন করেন সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকরা।
এ সময় বক্তব্য দেন, সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রভাষক দেলোয়ার হোসেন, ক্বারী আতাউর হক, লুৎফর রহমান চৌধুরী লিখন, শহিদুল ইসলাম খোকন, মনিরুল ইমলাম মিন্টু, সাইদুল ইসলাম, আশরাফ হোসেন, নুরুল ইসলাম ভোলা ও ফেরদৌস আলমসহ অন্যান্য গ্রাহকরা।
বক্তারা বলেন, অযৌক্তিকভাবে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করে গ্রাহকদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা গ্রাহকদের সেবা না দিয়ে উল্টো প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে লুটপাট শুরু করেছে। বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ থাকলেও মিটার থেকে টাকা কাটা হয়। তাছাড়া একাধিকবার কার্ড ক্রয়ের ঝামেলা পোহাতে হয় এবং হঠাৎ মিটার লক হয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এই প্রিপেইড মিটারের লক লাগলে বার বার বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও সমাধান হয় না।
এর আগে নগরীর কলেজ রোডস্থ নেসকোর প্রধান কার্যারয়ের সামনে বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির ব্যানারেও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বক্তব্য দেন সিপিবির জেলা সভাপতি ভাষা সৈনিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা কমরেড শাহাদৎ হোসেন, বিএনপি মহানগর আহবায়ক কমিটির সদস্য মির্জা বাবর বাবলু, বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুরের আহবায়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু, বামজোট রংপুরের সমন্বয়ক ও বাসদ জেলার আহবায়ক কমরেড আব্দুল কুদ্দুস, সিপিবি রংপুরের সাধারণ সম্পাদক কাফি সরকার, বাংলাদেশ জাসদ মহানগর শাখার সভাপতি গৌতম রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক মিরাজুন নবী মিলন, বিদ্যুৎ গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা কমিটির নেতা কামরুল হাসান টিটু।
এ সময় বক্তারা বলেন, নর্দান ইলেকট্রিসিটি কোম্পানি লিমিটেড গ্রাহকদের মতামত না নিয়ে কিংবা গণশুনানী না করে প্রি-পেইড মিটার সংযোগ একপ্রকার চাপিয়ে দিচ্ছে তারা। যা রংপুরের সর্বস্তরের জনগণ এটি প্রত্যাখ্যান করেছে। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় ৪ দফা দাবী উপস্থাপন করে গত ১৭ ডিসেম্বর নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়, সেসময় তিনি জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে গণশুনানী করার কথা জানালেও দু:খের বিষয়, তার আগেই সংযোগ স্থাপন শুরু করে দিয়েছে। যা দু:খজনক। গ্রাহকদের ধোঁয়াশার মধ্যে রেখে তারা নতুন করে লুটপাটের পথ তৈরী করছে। বক্তারা আরো বলেন, দেশের দারিদ্রপীড়িত ১০ টি জেলার মধ্যে রংপুর জেলা অন্যতম। সেই দারিদ্রপীড়িত রংপুরের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য যখন-তখন টাকা তুলে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখা বেশ কঠিন। তাছাড়া এই প্রিপেইড মিটার নিয়ে নানা ভীতি ও সন্দেহ রয়েছে গ্রাহকদের মাঝে। তাই গণশুনানী না করে আর কোন প্রিপেইড মিটার সংযোগ রংপুরে করতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারী দেন বক্তারা।
রংপুর মহানগর নাগরিক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ বলেন, প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে গ্রাহকরা কিছুই জানে না। গণশুনানি ও গ্রাহকদের মতামত ছাড়াই এই মিটার স্থাপন করা হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নেসকো রংপুর সার্কেল-১ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হাসনাত জামান বলেন, গণশুনানি অচিরেই করা হবে। তাছাড়া জেলার সমন্বয় সভা ও বিভাগীয় কমিশনার এবং সিটি কর্পোরেশনের বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারের ভালো দিক রয়েছে, তবে অনেকে হয়ত ভালোভাবে বিষয়টি জানেন না, যার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে নেতিবাচক আলোচনা হচ্ছে। যখন বিষয়টি পরিষ্কার হবে, তখন আর নেতিবাচক আলোচনা থাকবে না। এ সময় তিনি সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
উল্লেখ্য রংপুর নগরীতে নেসকো বিদ্যুত বিতরণ বিভাগ ৩ এর আওতায় ২২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে প্রিপেইড মিটার সংযোগ। রংপুরের অন্যান্য বিতরণ বিভাগেও সংযোগ শুরু হয়েছে। সীমিত পরিসরে সংযোগেই গ্রাহকদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।