বিডি ঢাকা ডেস্ক
আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে রীতিমতো ‘সয়াবিন তেল’ আতঙ্ক পেয়ে বসেছে ভোক্তাদের। প্রায় তিন মাস ধরে সরবরাহ সংকটে থাকা সয়াবিন তেলের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে গরুর মাংস, মুরগি, শসা, লেবু ও বেগুনের। ভোগ্যপন্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার রংপুরে বেড়েছে পূর্ণ আমদানি। গত সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে বেচা কেনাও।
এদিকে রংপুরের বাজারে এখনো সংকট কাটেনি সয়াবিন তেলের। এছাড়াও সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে পেঁয়াজ, ছোলা, চিড়া, মুড়ি, চিনিসহ বেশ কয়েকটি নিত্যপণ্যের দাম। রংপুরে সক্রিয় অসাধু সিন্ডিকেট কারণে ক্রমেই নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে নিত্য ব্যবহারযোগ্য ও ভোগ্যপণ্যের বাজার। তেল নিয়ে তেলেসমতি কমছে না। দোকানে দোকানে ঘুরেও মিলছে না সয়াবিন তেল। আর মিলেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। কিছু দোকানে তেল পাওয়া গেলেও নেতাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে শর্তসাপেক্ষে। তেল বিক্রির জন্য চাল, আটা, চা পাতাসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন ভোক্তাদের। দমদমা থেকে সিটি বাজারে বাজার করতে আসা আলতাফ, তৈয়বুর রহমান, মমিনুল ইসলাম রিপনসহ ক্রেতাদের অভিযোগ অধিক লাভের জন্য তেল মজুদ করেছে সিন্ডিকেট। আর সংকটের পিছনে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা দায় চাপাচ্ছেন তেল কোম্পানি গুলির উপর।
শনিবার (১ মার্চ) রংপুর নগরীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানির ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না। শুধু তা-ই নয়, বোতলজাত সয়াবিনের সঙ্গে নানা পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। বাজার থেকে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে সিন্ডিকেট। সেখান থেকে ডিলারের কাছে সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমেছে। তাই বাড়তি দামেও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এমনকি সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত দাম নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রতিদিনের রান্নায় প্রয়োজনীয় এ পণ্যের সন্ধানে ভোক্তাকে ঘুরতে হচ্ছে দোকান থেকে দোকানে। বোতল পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। ভোজ্যতেলের বাজারে এমন ভোগান্তিতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ভোক্তারা। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন,পবিত্র রমজানে সয়াবিন তেল চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হয়েছে। তাহলে কেন এ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে? এদিকে রমজানকে উপলক্ষ্য করে বাজারে মাছ, মুরগি, লেবু, শসা, বেগুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। মাংসের পাশাপাশি বাজারে সব ধরনের মাছের দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এদিকে, রমজান শুরুর আগে শুক্রবার বাজারে গরুর মাংস, মুরগি, মাছ, লেবু, শসা ও বেগুনের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি। ভোক্তাদের অভিযোগ, রমজানে বেশি দামে বিক্রির জন্য সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকানি শুধু নিয়মিত ও পরিচিত ক্রেতাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন। প্রতি বছর রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে যে ‘আগুন ভাব’ থাকে। এবার তা নেই। সয়াবিন তেল ও আরও দুই-একটি পণ্য বাদে খেজুর, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১০ কার্টুন তেলের চাহিদার বিপরীতে ১ কার্টুন তেলও পাওয়া যাচ্ছে না, এবং মিললেও কোম্পানির ডিলাররা নানা শর্তে সরবরাহ করছেন। ফলে, তারা বাহির থেকে বেশি দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
রংপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ পরিস্থিতিতে, বাজার নিয়ন্ত্রণে এবং তেল সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব, নিত্যপন্যের দাম কম বাজার হোক জনগণের নাগালের মধ্যে এমনটা প্রত্যাশা রংপুরবাসীর।