মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২১ পূর্বাহ্ন

রাজশাহীতে বোরো ধান কাটা শুরু, শ্রমিক সংকট!

বিডি ঢাকা ডট কম নিউজঃ
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০২২
  • ১৩৪ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডট কম নিউজঃ রাজশাহীতে বোরো ধান কাটা শুরু, শ্রমিক সংকট! রাজশাহীতে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলেও সংকট দেখা দিয়েছে ধান কাটার শ্রমিকের। অতিরিক্ত ধান দিয়েও কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, এখনও ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়নি। তাই শ্রমিকেরা কাজ শুরু করেননি। ধান পুরোপুরি কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট থাকবে না।
রাজশাহী কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এ বছর ৬৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। কিছু কিছু জমির ধান কাটা শুরু হয়েছে এক সপ্তাহ ধরেই। তবে ফলন কেমন হচ্ছে তা এখনও নিশ্চিত নয় কৃষি বিভাগ। তবে কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন, এবার ফলন কম। আর সে কারণেই শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমিকেরা ধান কাটা বাদ দিয়ে রাজশাহী শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাংলাকান্দর রাস্তার ধারে গত শুক্রবার বিকালে কাটা ধান একাই আঁটি বাধছিলেন হৃদয় আলী (৩০)। হৃদয় জানান, তিনি মূলত নলকূপের মিস্ত্রি। এবার নিজের এক বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নলকূপের কাজ বাদ দিয়ে এক চাচাতো ভাইকে নিয়ে নিজেরাই ধান কেটেছেন। ধান মাড়াইয়ের কাজটিও তাদের করতে হবে।

হৃদয় জানান, এবার ধানের ফলন কম। সে জন্যও শ্রমিকেরা ধান কাটতে চাচ্ছেন না। আগে ছয়-সাতজন শ্রমিক এক বিঘা ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ করে দিলে প্রায় আড়াই মন ধান দিতে হতো। এবার শ্রমিকেরা সাড়ে চার মণ চাচ্ছেন। তাও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ধানের বদলে টাকা দিলে একজন শ্রমিককে এখন এক বেলার জন্যই দিতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। গতবছর শ্রমিকের এই পারিশ্রমিক কম ছিল।
শ্রমিক না পেয়ে একই এলাকায় নিজের জমিতে একাই ধান কাটছিলেন কৃষক মো. টুকু। তিনি জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে ধান লাগানো থেকে কাটা-মাড়াইয়ের বেশিরভাগ শ্রমিকই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর। গত কয়েকবছর ধরে তারা রাজশাহী শহরে গিয়ে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। ফলে গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। কয়েকবছর ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকেরা দলে দলে এসে রাজশাহীর মাঠে মাঠে ধান কাটেন। এবার এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকেরা আসেননি। ফলে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট বাজারে এসে থামল একটি ভুটভুটি টেম্পু। সেটি থেকে একে একে নামলেন ১০-১৫ জন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নারী-পুরুষ শ্রমিক। তারা সবাই শহরে গিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনের রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করতে। কথা হলো ভুটভুটি টেম্পুর চালক কাঁকনহাট সেরাপাড়া এলাকার জুয়েল রানার সঙ্গে। তিনি জানান, শ্রমিকদের নিয়ে তিনি শহরে যান। কাজ শেষে আবার নিয়ে আসেন। মাঝে তিনিও শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজে লাগেন। জুয়েল বলেন, শ্রমিকদের প্রায় সবার কিস্তি আছে। শহরে কাজে গেলে প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায়। এতে কিস্তি দেওয়া সহজ হয়। তাই ধান না কেটে তারা শহরে যাচ্ছেন।

বিশরাপাড়া গ্রামের মিকাইল হাঁসদা ও তাঁর স্ত্রী পুলসুরি মুর্মুও জুয়েলের টেম্পু থেকে নামেন। তারাও জানান, তাদের কিস্তি আছে। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শহরে গিয়ে ৩৫০ টাকা করে ৭০০ টাকা পান। এরমধ্যে দুজনের যাওয়া-আসার টেম্পু ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। বাকি ৬০০ টাকা থাকে। এ দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিয়েও সংসার ভালই চলে। তাই তারা ধান কাটেন না। পুলসুরি মুর্মু বলেন, ‘ধান কাটার চেয়ে শহরের কাজের টাকায় পরে ধান কিনে নিব। এতেই বেশি লাভ হবে।থ
পুলসুরি মুর্মু ও মিকাইল হাঁসদাদের ধান কাটা বাদ দিয়ে শহরে কাজে যাওয়ার সংকট ইতোমধ্যে টের পাচ্ছেন ধান চাষ করা কৃষকেরা। ‘রাজশাহী ইজ দ্য বেস্ট সিটিথ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে রাঙ্গা নামের এক ব্যক্তি দুদিন আগে জমির পাকা ধানের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এখন ধান কাটার মৌসুম। ধান কাটার জন্য লেবার পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আগামী ১ থেকে ২০ মে পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের সকল কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।থ
এমন শ্রমিক সংকট নিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, কেবল ধান কাটা শুরু হয়েছে। এখনই শ্রমিক সংকট বলা যাবে না। কারণ, রাজশাহীর ধান কাটেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিকেরা। তাঁরা এখনও আসেননি। এক বিঘা ধান কেটে তো তাঁরা বসে থাকবেন না। সব জমির ধান পাকলে ওই শ্রমিকেরা আসবেন। তখন সংকট বোঝা যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com