বিডি ঢাকা ডেস্ক
রমজানে রাজশাহীতে বেড়েছে মাটির হাঁড়ির আখের গুড়ের চাহিদা। বিশেষ করে ভেজালমুক্ত ভিটামিন ও খনিজ পদার্থযুক্ত হওয়ায় চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। তাই এ গুড় বানাতে এখন রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। সব উপজেলায় আখ চাষ হলেও বেশি আখের গুড় তৈরি হয় পুঠিয়া, চারঘাট এবং বাঘাতে। চলতি মৌসুমে ৬৫০০ একর জমিতে আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
চারঘাটের আখের গুড়ের কারিগর সোলায়মান ১৫ বছর ধরে তৈরি মাটির হাঁড়ির গুড় বাজারে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, মাঘ থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত চাহিদা বেশি থাকে। চলতি রমজান ঘিরে এখন আমাদের কাজের চাপ বেড়েছে। এখন ক্রেতারা এসে বিশেষ চুলায় বিশেষ পাত্রের সামনেই ভিড় করছে। ভেজাল না থাকায় এর চাহিদা অনেক বেশি।
তিনি আরো বলেন, গত বছর প্রায় আড়াই লাখ টাকার গুড় বিক্রি করেছি এবারেও খারাপ হবে না। এবার ভেজালমুক্ত গুড় আড়াইশ’ টাকার উপরে কেজি দরে বিক্রি করছি। প্রত্যেক চুলায় আমাদের বিশেষ বালতির ১০ বালতি আখের রস থেকে গুড় বানানোর জন্য নেওয়া হয়। যেখান থেকে ৩৩ কেজির মতো বা নয় হাজার টাকার গুড় তৈরি হয়।
এদিকে, প্রতিবার যে ভালো মানের গুড় তৈরি হবে এমনটা নয় জানিয়ে জানে আলম বলেন, কোনোবার খারাপ হলে সেই গড় ফেলে দিতে হয়। বাবা-দাদার আমল থেকে এ অঞ্চলে আখের রস থেকে গুড় তৈরির বিষয়টি দেখে আসছি। সেই হিসেবে শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্য গুড় তৈরি। বাঘা-চারঘাটে এ কাজ এখনো করেন অনেকে। যারা করেন তারা নিজেরাই আখ চাষ করেন এবং সেই আখ দিয়ে ভেজালমুক্ত গুড় তৈরি করেন। কোনো ধরনের হাইড্রোজ বা কেমিক্যাল দেওয়া হয় না।
মাটির চুলার আগুনের তাপে তৈরি গুড় খুব সুস্বাদু হয় জানিয়ে নিয়ামুল বারি বলেন, পুরো কাজটি প্রাকৃতিক নিয়মে হয়। ক্ষেত থেকে আখ কেটে এনে পরিষ্কার করা হয়। এরপর সেই আখ থেকে রস বের করে বড় চুলায় জ্বাল দিয়ে গুড় বানানো হয়। যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয় তাও আখের ছাবা ও গাছের মাথার পাতাই যথেষ্ট।
তিনি বলেন, জ্বাল দিতে দিতে আখের রসের ভেতরে থাকা ছাবাসহ অন্য ময়লা ওপরে উঠে আসে। সেই ময়লা ছেঁকে তুলে এনে একটি পাত্রে রাখা হয়। কিছুক্ষণ পর সেখান থেকেও গুড় বের করা হয়। এক কথায় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো কার্যক্রম যেমন স্বচ্ছ, তেমনি এখানে কিছু ফেলনারও নয়। তবে রস খারাপ হলে গুড় আর তৈরি হবে না।
এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে ভালো মানের গুড়ের দাম বেশি হলেও এর চাহিদা বেশি থাকে। বিশেষ করে রমজানে মাটির হাঁড়ির আখের গুড়ের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। তাই এ সময়টাতে দোকানগুলোতে আখের গুড় বেশি পাওয়া যায়।
ক্রেতারা বলছেন, কোনটি ভালো কোনটি খারাপ সেটি যাচাইয়ের সুযোগ থাকে না। তাই ভালোর আশায় কম
দামের থেকে বেশি দামের গুড়েই আগ্রহ থাকে তাদের। কোনো বিক্রেতা যদি ভেজাল গুড় বেশি দামে বিক্রি করেন সেটিতেও ক্রেতাদের কিছু করার থাকে না।