রাজশাহীতে বাড়ছে হোটেল-রেস্তোরাঁ। রাস্তার ধার থেকে শুরু করে ভবন সবখানেই ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ। এরমধ্যে ভয়াবহ তথ্য হলো, নামিদামি রেস্তোরাঁসহ ফুটপাতের খাবারের দোকানে সবখানেই ব্যবহার হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর তেল।
নভেম্বর মাসে পরীক্ষা চালায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এই ফলাফলে উঠে এসেছে রাজশাহীর ৮৭ ভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁর তেলই ক্ষতিকর। মাত্র ১৩ শতাংশ রেস্তোরাঁ ব্যবহার করে ভালো তেল।
ফলে এসব রেস্তোরা-হোটেলের খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক আলসারসহ ক্যানসারও হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ১৬ অক্টোবর ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য পরীক্ষার পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে ফলাফল জানানোর জন্য একটি ‘ভ্রাম্যমাণ নিরাপদ খাদ্য পরীক্ষাগার’ চালু করা হয়।
এর মাধ্যমে ভোক্তারা নিজেদের আনা খাবারের নমুনাও বিনামূল্যে পরীক্ষার সুবিধা পান। তবে গত এক মাসে কোনো গ্রাহকই এটি করেনি। স্বেচ্ছায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ নগরী ও জেলার বেশ কিছু স্থানে পরীক্ষা চালায়।
এরমধ্যে নভেম্বর মাসে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ রাজশাহী জেলার গোদগাড়ী ও পুঠিয়া উপজেলার ১৬টি হোটেল-রেস্তোরাঁর তেল পরীক্ষা করে। এছাড়া রাজশাহী মহানগরের ২২ রেস্তোরাঁ তেল পরীক্ষা করা হয়। ওলিও টেস্ট কিটের মাধ্যমে চলে এসব পরীক্ষা।
এতে ৮৭ ভাগ তেলেই ক্ষতিকর পোলার ম্যাটেরিয়াল পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৫৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। আর ২৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ তেল ক্ষতিকর বা ব্যবহারের অনুপযোগী।
এ বিষয়ে জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ইয়ামিন হোসেন বলেন, আমরা পরীক্ষাগারটি চালু করেছি। এখানে সব মিলিয়ে ৩৮ ধরেনের টেস্ট হয়। তবে বর্তমানে মোট ২৫টি টেস্ট হচ্ছে। বাকিগুলো টেস্ট কিট এলেই শুরু হবে। এরই মধ্যে আমরা তেল, দুধ, বেকিং সোডাসহ বেশ কিছু খাবারের পরীক্ষা করেছি। এরমধ্যে তেলে সবচেয়ে ক্ষতিকর বস্তু পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে টেস্ট করার পর তাৎক্ষনিকভাবে সেটি ধ্বংস করে দিচ্ছি। তবে জরিমানা করছি না। সচেতন করছি মানুষকে যাতে এগুলো না কিনে। তবে জরিমানার প্রয়োগ না ঘটানো গেলে এটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুব সহজ হবে না।
এদিকে এসব তেল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। এসব তেল ব্যবহার বন্ধ না হলে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানান মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. মাহবুবুর রহমান খান বাদশা বলেন, পোড়া তেল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। পোড়া তেল খেলে প্রথমত এসিডিটি এরপর আলসার হবে। এছাড়া স্টমাক ক্যানসার হতে পারে, লিভারের সমস্যা হবে, হজমের অসুবিধা হবে। যেহেতু এগুলো কিডনিতে সিকুয়েশন হয়, তাই এসব তেলের খাবার বেশি খেলে তাৎক্ষনিকভাবে কিডনি ফেল করতে পারে। আর কম খেলে অল্প অল্প করে কিডনির সমস্যা হবে। এছাড়া মূত্রথলিতে সমস্যা হতে পারে।
তিনি বলেন, এগুলো সচেতনতা বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত থেকে এটি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয় হলো প্রশাসন থেকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সচেতন করতে হবে। কারণ অনেকেই এটি না বুঝে করে থাকেন। এগুলো বন্ধ করা না গেলে মানবদেহের ক্ষতি বাড়বে।