বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:২৬ অপরাহ্ন

রাজশাহী ৩৬ কোল্ড স্টোরেজে শ্রম আইনে আলু সংরক্ষনের দাবি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

রাজশাহীতে ৩৬টি কোল্ড স্টোরেজে শ্রম আইনের আলোকে আলু সংরক্ষণের দাবিতে এবং সম্প্রতি ৬টি ক্লোড স্টোরেজে হামলার প্রতিবাদ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে মহানগীর চেম্বার এ্যান্ড কমার্স ভবনে রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ এসিসিয়েশন এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ এসিসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, রাজশাহী জেলায় বর্তমানে ৩৬টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা এ খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। প্রত্যেকটি কোল্ড স্টোরেজে ৪০ জন কর্মকর্তা এবং কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এ হিসেবে প্রায় দেড় হাজার মানুষের প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে। শ্রমিক রয়েছেন প্রায় ১১ হাজার। এছাড়া প্রায় দুই লাখ কৃষক এবং ব্যবসায়ী এ কর্মকা-ের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। রাজশাহীর ৩৬টি কোল্ড স্টোরেজের মোট ধারণক্ষমতা ৯৫ লাখ বস্তা। এ পরিমাণ বস্তায় ৫ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়। কোল্ড স্টোরেজগুলোর অধিকাংশই জেলার পবা, তানোর, মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর এলাকায় অবস্থিত। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরো বলেন, কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা ব্যায় ইতোমধ্যে কয়েকগুন বেড়েছে। গত আট বছর আগে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ছিলো চার টাকা। বর্তমানে সেটি তিনগুন বেড়ে প্রতি ইউনিট হয়েছে ১২ টাকা। কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতনভাতা মাত্র কয়েক বছরে আট হাজার থেকে বেড়ে চারগুন হয়েছে। বর্তমানে একজন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন প্রদান হয়। শ্রমিকের মজুরি কয়েক বছরে বস্তাপ্রতি পাঁচ টাকা থেকে বর্তমানে ৩০ টাকা হয়েছে। ব্যাংকের সুদের হারও গত বছর ছিলো নয় শতাংশ। বর্তমানে এটি ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একারণে কয়েকটি কোল্ড স্টোরেজ বর্তমানে ঋণখেলাপির পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া ডলারের মূল্যমান টাকার বিপরীতে অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণে যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে কয়েক গুন। ফলে কোল্ড স্টোরেজ পরিচালনায় আমরা চরম বেকায়দায় পড়েছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা অচিরেই আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে পড়ব বলে আশঙ্কা করছি।

পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা আলু সংরক্ষণে বস্তাপ্রতি ভাড়া সামান্য কিছু বৃদ্ধি করেছি। গত বছর ৫০ কেজির বস্তাতে ৩৪০ টাকা ভাড়া নেওয়া হত। এর ফলে কেজি প্রতি সংরক্ষণে খরচ পড়ত প্রায় সাত টাকা। কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন (ইঈঝঅ) চলতি মৌসুমে কেজি প্রতি ভাড়া নির্ধারণ করেছে সর্বোচ্চ আট টাকা। এরপরেও কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে এ এসোসিয়েশনের সদস্যরা এর চেয়েও কম ভাড়ায় তারা নিজস্ব সিদ্ধান্তে আলু সংরক্ষণ করতে পারবেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজের এ ধরনের সহনশীল সিদ্ধান্তের পরেও অন্যায্য দাবি নিয়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের মত ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছে। এ অবস্থায় জেলা প্রশাসককে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করেছি। সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। এরপরেও তারা আরও ক্ষতিসাধণের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় কোল্ড স্টোরেজ মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিক ও কৃষকসহ সংশ্লিষ্টরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।

এমতা অবস্থায় তদন্তের সাপেক্ষে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের জোর দাবি জানানো হয়। ওই স্বার্থান্বেষি মহলটি প্রতি বস্তায় ৫০ কেজির স্থলে ৭০ থেকে ৮০ কেজি আলু সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজের মালিকদের অব্যাহত চাপের মুখে রেখেছেন। এটি দেশের প্রচলিত শ্রম আইনের পরিপন্থী। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৭৪, শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি-৬৮ (ট) এবং মহামান্য সুপ্রিম কোটের হাইকোট বিভাগে দায়ের কৃত রিট পিটিশন ১৭৬১/২০১৭ এ প্রদত্ত গত ০৫-০৩-২০১৮ তারিখের রায় মোতাবেক কোন শ্রমিককে তার ক্ষতি হতে পারে এমন কোন ভারী জিনিস উত্তোলন, বহন করা যাবে না।

বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর বিধি ৬৩ অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানের শ্রমিককে ৫০ কেজি ওজনের অতিরিক্ত ওজন বিশিষ্ট কোন দ্রব্য, যন্ত্রপাতি, হাতিয়ার বা সরঞ্জাম কারো সাহায্য ব্যাতিত হাতে বা মাথাই করে উত্তোলন বহন বা অপসারনের উদ্দেশে নিয়োগ না করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই মহলটি বস্তায় ৫০ কেজির পরিবর্তে ৭০ থেকে ৮০ কেজি সংরক্ষণের জন্য নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনা করেছে। আমরা শ্রম আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যথাযথ আইনের মধ্যে থেকেই কোল্ড স্টোরেজগুলো পরিচালনা করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহলের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সন্মেলনে বলা হয়, গত ১২ জানুয়ারী বিশেষ একটি মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের জন্য তানোর উপজেলার রহমান কোল্ড স্টোরেজের ৩ টি শাখায়, আল-মদিনা কোল্ড স্টোরেজ, তামান্না কোল্ড স্টোরেজ ও কোল্ড স্টোরেজে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের মত ভয়াবহ ঘটনাও ঘটিয়েছে। এর ফলে এ শিল্পে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলে আমরা গভীরভাবে আশঙ্কা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ এসিসিয়েশনের সভাপতি আবু বক্কর আলী, রাজশহী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুসহ কোল্ড স্টোরেজ এসিসিয়েশনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com