বিডি ঢাকা ডেস্ক
রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় মানুষের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হচ্ছে এবং গবাদি পশুর মধ্যে রোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পীরগাছার কিছু বাড়ির ফ্রিজে রাখা গরুর মাংসেও অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন মোঃ রুহুল আমিন জানিয়েছেন, আরও দুটি উপজেলার সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা আইইডিসিআরকে পাঠানো হয়েছে।
পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, গত দেড় মাসে কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখন সুস্থ আছেন। তবে দুজনের মৃত্যুর খবরের ভিত্তি সঠিক নয়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ একরামুল হক মন্ডল বলেন, ‘দেড় মাসে অন্তত পাঁচটি অসুস্থ গরু জবাই হয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুর মাংস স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছিল। আক্রান্তদের অনেকেই এই মাংসের সংস্পর্শে এসেছিলেন।’
আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরীন জানিয়েছেন, ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর এলাকায় গিয়ে ১২ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যাদের মধ্যে ৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স জীবাণু শনাক্ত হয়েছে।
রোগের ঝুঁকি ও প্রতিরোধ
অ্যানথ্রাক্স সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষের মধ্যে দেখা যায় এবং আক্রান্ত প্রাণীর মাংস, রক্ত, লালা, হাড় বা নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শে মানুষও সংক্রমিত হতে পারে। তবে মানুষ থেকে মানুষে রোগ ছড়ায় না। চামড়ায় ক্ষত, ফোঁড়া বা জ্বর, গলা ও মাংসপেশিতে ব্যথা হলো প্রধান উপসর্গ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, ‘অ্যানথ্রাক্সের চিকিৎসা আছে। অসুস্থ গরু মারা গেলে মাটির গভীরে পুতে ফেলতে হবে এবং কাক বা শকুনের জন্য বাইরে রাখা যাবে না। পশুকে নিয়মিত টিকা দিতে হবে এবং সংক্রমিত হলে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।’
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতায় পীরগাছাসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় দেড় লাখের বেশি গবাদি পশুকে অ্যানথ্রাক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। কসাইখানা ও গরুচাষীদের অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই বন্ধ রাখতে প্রশাসন সচেষ্ট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত রবিন বলেন, ‘অগাস্টের শেষ দিক থেকে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্স উপসর্গ নিয়ে রোগীরা আসা শুরু করেছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অনেকেই এখন সুস্থ। সদর ও পারুল ইউনিয়নের বাইরে নতুন আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি।’
চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, রান্নার আগে কাঁচা মাংসের সংস্পর্শে যারা আসেন, তারা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। তবে সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না করলে জীবাণু ধ্বংস হয় এবং সাধারণ মানুষের জন্য ঝুঁকি খুব কম।