বিডি ঢাকা ডেস্ক
রাজধানীর বাংলামোটর মোড়ে এসে থামছে শাহবাগমুখী গাড়িগুলো। অপর পাশে অপেক্ষারত কারওয়ান বাজারমুখী পরিবহনগুলোকে যাওয়ার সংকেত দিলো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য। প্রতিমুহুর্তে ব্যস্ততম সড়কের চাপ সামলে পরিবহনের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে এভাবে লেগে আছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। যদিও কড়া রোদ, তীব্র গরম, যানজট, উচ্চ শব্দের হর্ন সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজধানীজুড়ে। তবুও তারা উত্তপ্ত সড়ক ছাড়েনি এক মুহুর্তের জন্যও।
গতকাল রবিবার দুপুরে বাড়তি তাপাদাহে সৃষ্ট পরিবেশে সাধারণ মানুষ বাইরে বের হতে যখন ভয় পাচ্ছে তখন যানজট নিয়ন্ত্রণে সহকর্মীদের সাথে বাংলামোটর মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য আবুল কালাম (ছদ্মনাম)। চাকরি জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের হয়ে সড়কে দায়িত্ব পালন করে। ঝড়-বৃষ্টি, রোদ, উচ্চ শব্দের হর্ন আর ধুলোয় থেকে গায়ে জাড়িয়েছে নানা অসুস্থতা। তবুও দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তা প্রকাশ পাচ্ছে তার কথায়। দেশ রূপান্তরের প্রশ্নে হাসিমুখে বলেন, নয় বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাফিক বিভাগে চাকরি করছি। ঝড় বৃষ্টিই বা গরমের মতো অস্বস্তিকর পরিবেশেও দায়িত্বে অবহেলা করিনি। সিনিয়রদের নির্দেশ পেয়ে অসুস্থতা নিয়েও বহুবার সড়কে দাড়িয়েছি।
গায়ের ইউনিফর্ম দেখিয়ে ট্রাফিক পুলিশের এই কনস্টেবল বলছিলেন, আজকে অনেক গরম, ডিউটির শুরু থেকেই ঘামছি কিন্ত সড়ক ছেড়ে যাইনি। একটু সরে গেলেই এলামেলোভাবে চলতে থাকবে গাড়িগুলো এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়বে। ডিউটির পুরো সময় দাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতোটা অস্বস্তিক পরিবেশে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে হয়, এতো সমালোচনা হয় তবুও আমার দায়িত্ব আমি কিন্ত পালন করে যাচ্ছি।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের তীব্র গরমেও সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তারা বলছে, এবারের মতো তাপদাহ এর আগে কখনও দেখেননি তারা। এমনিতেই রাজধানীতে প্রচণ্ড গাড়ির চাপ সামলাতে তাদের নানা রকম সমস্যা হয়। এছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে বায়ু দূষণের শিকার হতে হয় তাদের। এর মধ্যে চলমান তাপদাহ তাদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তারা রাজধানীর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যগণ হিট স্ট্রোকসহ পানি শূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছে। অনেক ট্রাফিক সদস্যরা ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। যেসব ট্রাফিক সদস্যের হাই-প্রেসার আছে তাদের এই গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও
বেশি সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়া ইউনিফর্ম পরে এ গরমে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। আবার যেসব পুলিশ বক্স টিন-শেডের সেখানে আরও ভয়াবহ গরম। ফলে সেখানে বিশ্রাম নেওয়ারও সুযোগ নেই। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রখর খরতাপ উপেক্ষা করে দায়িত্বপালনরত ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্যের পেশাদারিত্ব ও মনোবল অটুট রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
তার নির্দেশনায় প্রচণ্ড দাবদাহে কমর্রত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের একটু বাড়তি স্বস্তি দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সড়কে দাড়িয়ে অসহনীয় পরিবেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যররা। অতিরিক্ত গরমে তাদের দায়িত্ব পালন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তাদের মনোবল ঠিক রাখতে যা করতে হয় আমরা সব করবো। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এবার ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যের জন্য সুপেয় পানির বোতল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত প্রভৃতি সরবরাহ করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ছাতা সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি ট্রাফিক বক্সে হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ও তাপপ্রবাহের মধ্যেও সুস্থ থাকতে প্রত্যেক ফোর্সকে করণীয়-বর্জনীয় সম্পর্কে ব্রিফিং প্রদান করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক প্রধান) মুনিবুর রহমান বলেন, তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। এই মুহূর্তে উত্তপ্ত রোদে ইউনিফরম পরে পিচঢালা সড়কে দাঁড়িয়ে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব একাগ্রচিত্তে পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
এ সময় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মনোবল বাড়াতে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে একদিকে ফোসের্র মনোবল যেমন চাঙা হচ্ছে, অপরদিকে দাবদাহের মধ্যেও ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নগরবাসী পাচ্ছেন সর্বোত্তম সেবা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ডিএমপির আটটি ট্রাফিক বিভাগের সকল পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবার স্যালাইন সরবরাহের উদ্যোগ নেন। এই তীব্রে তাপদাহ যতদিন থাকবে ততদিন পুলিশের এই কার্যক্রম চলবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ট্রাফিক রমনা বিভগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোহেল রানা জানান, এই অসহনীয় গরমে রাস্তায় ডিউটি করা সত্যিই কষ্টকর। কমিশনার এই উপলব্ধি থেকে ট্রাফিকের সকল পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইনের ব্যবস্থা করেছেন। এই উদ্যোগ ট্রাফিকের সকল সদস্যদের এই তীব্র গরমের মাঝেও দায়িত্ব পালনে আরও উদ্বুদ্ধ করবে।
এদিকে ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের জন্য সরবরাহ করা বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাবার স্যালাইন অসহায়দের মাঝেও বিতরণ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আটটি বিভাগের ট্রাফিক সদস্যদের জন্য পর্যাপ্ত সুপেয় পানির বোতল সরবরাহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত প্রভৃতি সরবরাহ করা হচ্ছে। সড়কে রিকশাচালক ছাড়াও অনেক অসহায় মানুষকে এসব খাবার দেয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর জানিয়েছে, আইজিপির নির্দেশে উচ্চ তাপমাত্রায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের পানিস্বল্পতা ও শারীরিক দুর্বলতার হাত থেকে রক্ষা করতে বিশেষ প্রণোদনা দিয়ে ট্রাফিক বিভাগের প্রত্যেক সদস্যের জন্য সুপেয় পানির বোতল, খাবার স্যালাইন, ফলের জুস, লেবুর শরবত প্রভৃতি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি ট্রাফিক-বক্সে হাত-মুখ ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দাবদাহ থেকে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের স্বস্তি দিতে ও তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গ্রহণ করা হয়েছে নানা ধরনের কার্যকরী উদ্যোগ। দাবদাহ যতদিন থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম চলবে।