বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শপথ নিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শত শত ইয়ুথ লিডার। সোমবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল অডিটোরিয়ামে ‘ইয়ুথ লিডার্স কনফারেন্স’ অনুষ্ঠানে এই শপথ নেন তারা। শপথবাক্য পাঠ করান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল।
একই অনুষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডা. শিমুল এমপির কাছে দাবি জানান তারা।
তামাক প্রতিরোধের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুনাগরিক গড়ে তোলার লক্ষে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে এই কনফারেন্সের আয়োজন করে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এমপি, বলেন, “ধূমপান ও তামাক তরুণদের ওপর বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নতুন করে আর যেন ধূমপায়ী যেন তৈরি না হয়, সে লক্ষ্য অর্জনে স্কুল ক্লাবের মাধ্যমে তরুণদেরকে সচেতন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে আমাদের কিশোর-কিশোরীদেরকে সাথে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জয়নাল আবেদিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ (গ্যাভি) সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন (সিএসও) স্টিয়ারিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, “তামাক কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয় প্রচার-প্রচারণা, প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান আয়োজন এবং কম দামে বিড়ি-সিগারেট বিক্রির মাধ্যমে তরুণ ও যুবসমাজকে টার্গেট করছে। শুধু তাই নয়, অন্যের ধূমপানের কারণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় অগণিত নারী ও শিশু। তার চেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ নেশাগ্রস্ত মানুষ প্রথমে বিড়ি বা সিগারেট দিয়ে শুরু করে এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে যেসকল দোকানে তামাকপণ্য বিক্রি করা হয়, তার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ দোকানে তামাক কোম্পানিগুলো আকর্ষণীয়ভাবে তামাকপণ্যের প্রচার-প্রচারণা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই শিক্ষার্থীদের ধূমপান ও তামাকমুক্ত পরিবেশে গড়ে তুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আশপাশে তামাক পণ্য বিক্রি ও প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে শতভাগ ধূমপান মুক্ত করতে হবে।”
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. ইফতেখার মুহসিন বলেন, “তামাক মানবদেহের জন্য একটি ভয়ংকর বিষ। বিশ্বজুড়ে তামাকজনিত রোগে বছরে প্রায় ৮০ লাখের বেশি মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সরাসরি তামাক ব্যবহারের কারণে মারা যায় ৭১ লাখ মানুষ এবং পরোক্ষ ধূমপানের কারণে মারা যায় প্রায় ৯ লাখ মানুষ। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। বাংলাদেশের অপ্রাপ্তবয়স্কদের (১৩-১৫ বছরের মধ্যে) মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের তামাক ব্যবহার করে। প্রায় ৫৯ শতাংশ মানুষ পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। ফলে হৃদরোগ এবং ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই সুস্বাস্থ্য অর্জনে, জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কিশোর-কিশোরীদের অবশ্যই পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছে তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে তামাক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাইফুল মালেকসহ সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ। সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।