শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২৭ অপরাহ্ন

শেরপুরে সংবাদ প্রকাশের জেরে ভোরের কাগজের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৮ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকোচায় সোমেশ্বরী নদীর ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু লুটপাটের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ভোরের কাগজের সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার ( ২৩ অক্টোবর) রাতে উপজেলার তাওয়াকোচা বালু মহালের সোমেশ্বরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড্রেজার মেশিন মালিক ও ইজারাদারের লোকদের মধ্যে এক সংঘর্ষ হয়। এতে ইজারাদারের দুই কেয়ারটেকার ও ড্রেজার মেশিন মালিকদের ৮ জন আহত হয়।

এ বিষয়ে ২৫ অক্টোবর দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বালু মহালের ইজারাদারের কেয়ারটেকার জনি মিয়া বাদি হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫/২০ জনকে আসামি করে ঝিনাইগাতী থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ভোরের কাগজ শেরপুর প্রতিনিধি খোরশেদ আলমকে ৭ নাম্বার আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, চলতি বছর সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকোচা বালু মহালটি এক বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর জমি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ১ কোটি টাকায় টেন্ডারের মাধ্যমে বালু মহালটি পান শ্রীবরদী উপজেলার শামীম এন্টারপ্রাইজ। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বালু মহালটি স্থান নির্ধারণ করে বুঝিয়েও দেয়া হয়।

জানা গেছে, লিজকৃত তাওয়াকোচা মৌজায় ৭ একর জমিতে ২৮টি ড্রেজার মেশিন বসানো সুযোগ থাকলেও ইজারাদারের লোকজন ও ড্রেজার মেশিন মালিকরা বালু মহালের ইজারার শর্ত ও নিয়মনীতি ভঙ্গ করে লিজ এলাকার বাইরে খাড়ামুড়া, রাঙ্গাজান, বালিজুরি হালুয়াহাটিসহ বিভিন্ন স্থানে ৫ কিলোমিটার এলাকায় ২ শতাধিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। বেপরোয়াভাবে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ফলে বালিজুরি সেতু, বালিজুরি উচ্চ বিদ্যালয়সহ খাড়ামুড়া গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। ভারি ট্রাকট্রলি ও শতশত মাহিন্দ্র অবাধ যাতায়াতের কারণের রাস্তাঘাট ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় তাওয়াকুছা বালিজুর সড়ক বন্ধ করে দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বালুর স্তুপ। এতে পথচারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

তাওয়াকোচা গ্রামের ইউপি সদস্য রহমত আলী, প্রবীণ ব্যক্তি মহসিন আলী বলেন, মোরশেদ আলম, খাড়ামুড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম, আব্দুর রহিমসহ এলাকাবাসী জানান, লিজকৃত তাওয়াকোচা মৌজায় কোন বালু নেই। ফলে ইজারাদারের লোকজন লিজ এলাকার বাইরে থেকে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছেন। প্রতিদিন অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত প্রায় ১০০ ট্রাক বালু লুটপাট করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের মতে প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ হাজার টাকায়। বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন ও অবাধে পরিবহনের কারণে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকি সম্মুখীন হয়ে পরছে, অপরদিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণে রাজস্ব আয় থেকে। এসব অবৈধ বালু লুটপাট বন্ধের বিষয়ে মাঝেমধ্যেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ভাঙচুর করা হচ্ছে বালু উত্তোলন যন্ত্র ড্রেজান মেশিন। করা হচ্ছে জরিমানা, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে সাজা। কিন্তু এরপরেও বালু লুটপাট বন্ধ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় একাধিকবার সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ অক্টোবর ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনিন্দা রানী ভৌমিকের নেতৃত্বে তাওয়াকোচা বালু মহালে অবৈধভাবে বালু লুটপাট বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বিকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৫ টি ড্রেজার মেশিন ও মেশিনের পাইপ ভাংচুর হয়। অবৈধ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত এক শ্রমিককে ৫ মাসের সাজা ও দেয়া হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় তাওয়াকোচা বালু মহালের রাজস্ব আদায় ঘরে ইজারাদারের লোকজন আত্মগোপন করে। সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শেষে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন চলে আসলে রাজস্ব আদায় ঘরের লোকজন বের হয়ে আসে। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ভাঙচুরকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ড্রেজার মেশিন মালিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে রাজস্ব আদায় ঘরে ইজারাদারের লোকদের উপর হামলা চালায়। ড্রেজার মেশিন মালিকদের দাবি, তারা প্রতি ট্রাক বালু থেকে ৭৫০০ ট্রাকা রাজস্ব দিচ্ছেন প্রশাসনকে। তাদের ড্রেজার মেশিন ভাঙচুর করবেন কেন?।

এ সংঘর্ষে ইজারাদারের দুইজন ও ড্রেজার মেশিন মালিকদের পক্ষের ৮ জন আহত হয়। এ ব্যাপারে ২৫ অক্টোবর দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে উক্ত ঘটনায় ড্রেজার মেশিন মালিকরা মামলা না করলেও ইজারাদারের পক্ষ থেকে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনের নামে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। উক্তমামলায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রতিনিধি খোরশেদ আলমকে ৭ নাম্বার আসামি করা হয়।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল আমিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি বিষয়ে দেখবেন বলে জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেলও বলেছেন একই কথা।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com