নিজস্ব সংবাদদাতা : সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনিসুল হক। তার কান্নার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মে) রিমান্ড শুনানি শেষে রোজিনাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আনিসুল হক ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের একটি ভবনের সিঁড়িতে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনিসুল হক ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন।
এর আগে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আনিসুল হক বলেন, ‘সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বাংলাদেশের একটি পবিত্র স্থানে গিয়ে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এর তীব্র নিন্দা জানাই।’
আনিসুল হক বলেন, ‘সাবেক এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন- একটি দেশে সরকার বা সংবাদপত্র যেকোনো একটি থাকবে, এমন পরিস্থিতিতে বেছে নিতে বললে তিনি সংবাদপত্রকে বেছে নেবেন। অথচ আমাদের দেশে সংবাদপত্রকে শত্রু মনে করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের চোর বলা হচ্ছে। এটা তো হতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সরকার চাইলেই রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। তারপরেও আমরা আইনগতভাবে লড়াই করছি। আমরা জানি, আদালতে আমরা ন্যায়বিচার পাব এবং আমরা ন্যায়বিচার পেয়েছি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে রিমান্ড দাবি করা হয়েছিল। আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করেছেন। রোজিনা ইসলামের জামিন শুনানির জন্য আদালত ২০ মে দিন ধার্য করেছেন।’
এদিকে, শুনানি শেষে আদালত থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’ একথা বলার সাথেই তাকে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ ‘কথা বলা যাবে না, কথা বলা যাবে না’ বলে তাকে সরিয়ে নেয়।
এদিকে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের জামিনের দাবিতে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন প্রতিবাদ জানিয়েছে। তার জামিন না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ)।
এছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন, মহিলা পরিষদসহ দেশের বিভিন্ন প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সংগঠনের ব্যানারে প্রতিবাদ জানানো হয়।
সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় আনা হয়।
রাতে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ উসমানী এ মামলা দায়ের করেন। সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া মোবাইল ফোনে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলা এবং আরও কিছু নথি লুকিয়ে রাখার অভিযোগ এনেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ বেলা ১১টার একটু পরে সিএমএম আদালতে তোলা হয়ে রোজিনাকে। এর আগে তাকে শাহবাগ থানা থেকে আদালতে নেওয়া হয়। সকাল ৮টার দিকে রোজিনা আদালতে পৌঁছান। সে সময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।