বিডি ঢাকা ডেস্ক
মুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে দ্রুত গতিতে বাড়ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। মাত্র দশদিনের ব্যবধানে শাহজাদপুরের জালালপুরের গুচ্ছগ্রাম ও পাচিল এলাকার প্রায় দুই শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা ও মসজিদসহ হাট-বাজার।
ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষেরা।
ভাঙন কবলিতদের অভিযোগ, সরকার ভাঙন রোধে নদী তীর সংরক্ষণে বরাদ্দ দিলেও সঠিক সময়ে কাজ না করায় তাদের বাস্তুভিটা হারাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনকবলিতরা ভাঙনরোধে জিওব্যাগ ফেলার দাবি জানিয়েছেন।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, গত ২ জুন থেকে যমুনার নদীর পানি দ্রুত গতিতে বাড়ছে। শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার মাত্র ২ দশমিক ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা: ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।
এদিকে পানি বাড়ার সাথে সাথে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী, খুকনী ও জালালপুরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। দশদিনের ব্যবধানে প্রায় দুই শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রতিদিন ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। অনেকে ঘর-বাড়ি ভেঙে স্তুপ করে রেখে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করছে।
ভাঙন কবলিত এলাকার গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান, হারুন মিস্ত্রী, আবু সাইদ, শাহাদত সরকার ও পাচান আলী জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর, খুকনী ও কৈজুরী ইউনিয়নে যমুনার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে একেকজন মানুষের ১০-১১বার বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। ফসলি জমিসহ সবকিছু হারিয়ে সবাই নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আবারও ভাঙনের মুখে পড়তে হলো।
তারা বলছেন, শুধু আমাদের নয় এ অঞ্চলের প্রায় আট-১০টি গ্রামের হাজার হাজার বাড়িঘর কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, তাঁতশিল্প, রাস্তঘাটসহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। বহু মানুষ বাস্তুহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ভাঙন কবলিতরা বলছেন, দ্রুত ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে শতশত বাড়িঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাবে।
ভাঙনকবলিতরা অভিযোগ, ভাঙনরোধে দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার এ অঞ্চলে ভাঙনরোধে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও ঠিকাদার ও পাউবোর গাফিলতিতে কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। যে কারণে এসব অঞ্চল ফের ভাঙনের কবলে পড়তে হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, পানি বাড়ায় শাহজাদপুরে কৈজুরীর গুচ্ছগ্রাম, পাচিল ও হাট পাচিল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনরোধে জিওব্যাবগ ফেলা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, শাহজাদপুর উপজেলায় যমুনার ডানতীর সংরক্ষণের জন্য সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৬৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। প্রকল্পের আওয়াতায় নদী ড্রেজিং করে নদী প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। সিসি ব্লক ম্যানুফ্যাকচারিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মানুফ্যাকচারিং শেষ হলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে। এ কাজের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত । কাজ শেষ না হওয়ায় আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হবে। আশা করছি আগামী বছর স্থায়ী বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষে আর ভাঙন দেখা দেবে না।