সংঘাত থেমেছে। কিন্তু থামছে না মৃত্যুমিছিল। সিরিয়ায় ভূমধ্যসাগরীয় উপকূল অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাড়ি, রাস্তা এবং চাষের জমি থেকে উদ্ধার হচ্ছে দেহ। ব্রিটেনে অবস্থিত মানবাধিকার সংক্রান্ত সিরীয় পর্যবেক্ষণাগার থেকে সে সব দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করা হচ্ছে। বুধবার যে পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে সিরিয়ায় গত দু’দিনের সংঘাতে ১৩৮৩ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ছে।
সিরীয় পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ার নিরাপত্তাবাহিনী আলাওয়াইট নামের বিশেষ একটি সম্প্রদায়কে নিশানা করেছিল। বেছে বেছে তাদের হত্যা করা হয়েছে। যে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছে, তার প্রত্যেকটির দেহে কাছ থেকে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। অর্থাৎ, সামনে গিয়ে গুলি করে বা অন্য কোনও অস্ত্রের মাধ্যমে তাঁদের মারা হয়েছে। সিরিয়ার এই আলাওয়াইট জনগোষ্ঠী প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বাশার-আল আসাদের ঘনিষ্ঠ ছিল। বাশারের পদত্যাগের পর তাই আলাওয়াইটেরা বর্তমান সরকারের নিশানায় রয়েছেন বলে অভিযোগ। নিহত ১৩৮৩ জনের মধ্যে অধিকাংশই আলাওয়াইট সম্প্রদায়ভুক্ত। অভিযোগ, রেয়াত করা হয়নি মহিলা এবং শিশুদেরও। সিরিয়ার যে অংশে আলাওয়াইটদের বাস, সেখানকার রাস্তায় মৃতদেহের স্তূপ পড়ে আছে এখনও।
সিরীয় পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, আলাওয়াইটদের বিরুদ্ধে এই প্রতিশোধ-হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলি। তবে তাদের উপরেও হামলা হয়েছে। আলাওয়াইট এবং আসাদঘনিষ্ঠদের হামলায় ২০০-র বেশি নিরাপত্তা আধিকারিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
সিরীয় পর্যবেক্ষণাগার জানাচ্ছে, সে দেশে সংঘাত তীব্র আকার নেয় উপকূলবর্তী লাটাকিয়া এবং টারটাস প্রদেশে। এই এলাকায় আলাওয়াইটেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অভিযোগ, শুধু বেছে বেছে হত্যা নয়, এই অংশে বহু ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বিচারে। সেখানকার বাসিন্দারা অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কোনও ক্ষেত্রেই আইনি কোনও বাধা আসেনি। অভিযোগ, মহিলাদের উপর নির্মম অত্যাচার করা হয়েছে। তাঁদের নগ্ন করে হাঁটানো হয়েছে রাস্তা দিয়ে। তার পর নগ্ন অবস্থাতেই তাঁদের গুলি করে মারা হয়েছে। সমাজমাধ্যমে সিরিয়ার এই প্রতিশোধ-হত্যার একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল। সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম।
প্রায় দেড় দশকের গৃহযুদ্ধের পর গত ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করে রাজধানী দামাস্কাস দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। তার পর সিরিয়ায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। এখনও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আসাদ রাশিয়ায় চলে গিয়েছেন। কিন্তু সিরিয়ার সেই অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা আধিকারিকদের সঙ্গে তাঁর অনুগামীদের সংঘাত চলছে। সেই সংঘাত প্রবল আকার নেয় বৃহস্পতিবার থেকে। সে দিন জাবলেহ্ শহরে এক অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান চালিয়েছিল নিরাপত্তাবাহিনী। সেখানে তাদের বাধা দেন আসাদ-অনুগামীরা। তার পর থেকেই ক্রমে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে।