অনলাইন নিউজ : পানি কমলেও সুনামগঞ্জ পৌরশহরসহ জেলার সবকটি উপজেলায় এখনও পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। পৌর শহরের ৫০ শতাংশ বাসা বাড়িতে পানি। বিভিন্ন সড়ক এখনও পানির নিচে। কিছু এলাকায় পানি কমে যাওয়ার পর দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এদিকে আবার বাড়ছে সুরমার পাানি। এতে ফের দেখা দিয়েছে বন্যাতঙ্ক।
গত দুদিন ধরে সুনামগঞ্জের আকাশে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। রোদের দেখা পাওয়ায় পুরো শহরের বাসাবাড়ি দোকানপাটের জিনিসপত্র রাস্তার পাশেই শুকাতে দিয়েছে।
মহিলা কলেজ রোডের বাসিন্দা শাহিন আহমদ বলেন, পানি ছিল এটা এক ঝামেলা ছিল। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর আরও বড় দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ঘরের এমন কোনো জিসিন নাই যা ভিজেনি।
পানি নেমে যাওয়ার পর শহরেই সবচেয়ে বেশি পচা দুর্গন্ধ দেখা দিয়েছে। শহরের বাসা বাড়ির আঙিনা থেকে শুরু করে প্রত্যেক সড়কের অলিগলিতে এখন ময়লার স্ত‚প। এসব ময়লার স্ত‚প থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে যারা বাড়িতে ফিরেছেন তারাও ঘরে টিকে থাকতে পারছেন না দুর্গন্ধের জন্য।
পৌর শহরের বক পয়েন্ট আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জাহিদ আহমদ বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরে আসলাম। সবকিছু আবার নতুন করে ঠিকঠাক করতে হচ্ছে। তবে এখন বড় সমস্যা হলো দুর্গন্ধের জন্য থাকা যাচ্ছে না ঘরে।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে শহরে মাইকযোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে পচা দুর্গন্ধ থেকে রোগ-বালাই দেখা দিতে পারে। এসব দুর্গন্ধ থেকে রক্ষার জন্য ঘরের আশপাশে বিøচিং পাউডার ব্যবহারের জন্য বলা হচ্ছে মাইকিং করে।
শহরের হাছননগর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হান্নান বলেন, মাইকিং করা হচ্ছে ঠিক আছে। তবে পৌরসভার পক্ষ থেকে যদি দ্রুত সড়ক থেকে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা না হয় তাহলে আমরা সুস্থ থাকতে পারব না।
এ বিষয়ে পৌর মেয়র নাদের বখত বলেন, পৌর এলাকায় ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়েছ। নোংরা পরিবেশ থেকে যাতে কোনো ধরনের রোগ-বালাই না হয় সে জন্য আমরা সড়কগুলো ভালো করে ধুয়ে পরিষ্কার করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বন্যায় পৌরশহরসহ জেলার ১২ উপজেলার ২৩ লাখ মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে আরও অন্তত দুই মাস সময় লাগবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের বাসিন্দা আলি হোসেন বলেন, এই বন্যায় আমার ঘর একেবারে ভেঙে গেছে। এখন আমার নিজের সাধ্য নাই যে ঘর মেরামত করব।
পৌর শহরের হাজিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মামুন আহমদ বলেন, তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে ঘর লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এ ছাড়া আমরা ঘরে ছিলাম না। আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম। ঘরে গিয়ে দেখি টিভি ফ্রিজ নাই।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন আহমদ বলেন, আমরা বানভাসি মানুষদের উদ্ধার কাজে নিয়োজিত ছিলাম। শহরে যাতে কোনো ধরনের চুরি সংঘটিত না হয় সে জন্য আমাদের টহল জোরদার করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জে বাসভাসি মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এখনও যেহেতু কিছু এলাকায় পানি রয়েছে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।
পানি বাড়ছে আবার : গত দুদিন ধরে পানি কমতে শুরু করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র। পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২২০ মিলিমিটার এবং সুনামগঞ্জের ছাতকে ১৬০ মিলিমিটার ফলে নদীর পানি একটু বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে ওপারে বৃষ্টির ফলে জেলার দোয়ারাবাজার সীমান্ত গ্রামগুলোতে পানি নতুন করে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা ভারতের পূর্বাভাস দুদিন পরে পাই। যদি ভারতের মেঘালয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টি হয় তাহলে সুনামগঞ্জের বন্যার অবনতি হতে পারে।
সিলেটে ডায়রিয়ার প্রকোপ : এদিকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত সাত দিনে ২১৯ জন ডায়ারিয়া রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। এসব আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া ডায়রিয়ার পাশাপাশি অনেকে চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চর্মরোগের জন্য কেউ হাসপাতালে ভর্তি না হলেও রোগীরা সেবা নিতে আসছে। জেলায় চিকিৎসাসেবার জন্য বর্তমানে ১৪০টি চিকিৎসক দল কাজ করছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, মঙ্গলবার জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল ৪৮ জন। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির পর ডায়রিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এ জাতীয় আরো খবর..