বিডি ঢাকা ডেস্ক
সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। আয়তনের দিক থেকে এটি মাত্র আট বর্গ কিলোমিটারের একটি দ্বীপ। যার দৈর্ঘ উত্তর-দক্ষিণে প্রায় নয় কিলোমিটার। মূল ভখণ্ড টেকনাফ থেকে দ্বীপটির দূরত্ব হচ্ছে নয় কিলোমিটার। আবার মায়ানমার থেকে দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। বর্তমান জনসংখ্যা নয় হাজারের একটু বেশি। ভু-রাজনীতি এবং পর্যটন বিবেচনায় দ্বীপটির গুরুত্ব এখন তুঙ্গে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান এবং জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র পর্যটকদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে থাকে। এখানে রয়েছে ৬৬ প্রজাতির প্রবাল; ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক; ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি। ভৌগলিকভাবে এটির উত্তর পাড়ার নারিকেল জিঞ্জিরা; দক্ষিণ পাড়ার লেজের মত এলাকা এবং ১০০-৫০০ বর্গ মিটার আয়তেনের ছোট্ট দ্বীপ ছেড়াদিয়া বা ছেঁড়া দ্বীপ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ এবং বিচরণ ক্ষেত্র। সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ বছর আগে থেকেই জনবসতি শুরু হয়। এক সময় মাত্র তেরোটি পরিবার এখানে স্থায়ী নিবাস গড়েন বটে। তবে, মাত্র গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে ব্যাপক হারে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। কারণ, ঐ সময় থেকে পর্যটক যাতায়াত এবং জমি কেনাবেচার সংস্কৃতি শুরু হয়।যা পরোবর্তী দশকেই অনেকের দৃষ্টি কাড়ে ব্যাপকভাবে এবং দ্বীপটির গুরুত্ব বাড়তে থাকে গাণিতিক হারে। যা এখন এসে বেসামাল অবস্থায় ঠেকেছে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস হচ্ছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন মৌসুম। ঐ সময়ে প্রতিদিন ৪-৫ টি লঞ্চে করে মূল ভূখণ্ড থেকে পর্যটকরা সেখানে যাতায়াত করে থাকেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ তথা এখানকার মূল আকর্ষণ শৈবাল এবং জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্রসহ সার্বিক পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। তারা প্রথম তাদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসে ১৯৯৯ সালে সেন্টমার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকাটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে।পরবর্তীতে ২০১২ সালে উদ্ভিদ ও প্রাণী রক্ষা আইনও প্রয়োগ করার চেষ্টা করে।
কিন্তু এসব কোন উদ্যোগই সফলতার মুখ দেখতে না পারার প্রেক্ষাপটে পর্যায়ক্রমে ২০১৯ সালে দিনের বেলা পর্যটন চালু থাকবে রাতের বেলা থাকতে পারবে না; ২০২০ সালে সেন্টমার্টিন প্রবেশের ক্ষেত্রে নিবন্ধন এবং পর্যটকের সংখ্যা সর্বোচ্চ এক হাজার ২৫০ জন; জাহাজে অতিরিক্ত যাত্রী না নেয়া এবং সর্বশেষ রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করা হয়। আবার ২০২১ সালে সিদ্ধান্ত হয় লঞ্চ-জাহাজে মোট যাত্রীর সংখ্যা এক হাজার ২৫০ জনের মধ্যে রাখতে হবে এবং একজন ব্যক্তি পাঁচজনের বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না। সর্বশেষ ২০২৩ সালে প্রতিদিন ৮৮২ জন পর্যটক নিদিষ্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। অথচ ধারাবাহিকভাবে নেয়া এসব সিদ্ধান্তের কোনটিই বাস্তবায়িত হয়নি। এবার নতুন পরিবেশ উপদেষ্টা এসে হাল ধরে বলেছেন, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাষ্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধকে সাথে রেখে আগের সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো যেমন হোটেল মালিক, লঞ্চ মালিক, ট্যুর অপারেটর এবং পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে ২০ অক্টোবরের মধ্যে একটি চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসেন।