বিডি ঢাকা ডেস্ক
দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। শেষ সময়ে সেমাই, চিনি ও পোলাও চালসহ ঈদপণ্যের বেচা বিক্রি বেড়েছে। তবে অন্যান্য ঈদের তুলনায় এবার দাম তেমন একটা বাড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। দাম অনেকটা স্বস্তির হওয়ায় স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করে খুশি ক্রেতারাও।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) ঈদের আগে শেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগসহ বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে ঈদবাজার অনেকটাই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে। ক্রেতাদের চাপে বিক্রেতাদের যেন কথা বলার কোনোই ফুরসত নেই। শুধু বাজারগুলোই নয়, ইফতারের পর রাজধানীর অলি-গলির দোকানগুলোতেও প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে, যাদের অধিকাংশই সেমাই-চিনিসহ নানা জাতের মসলা কিনে বাসায় ফিরছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের ঈদের বাজারে প্যাকেটজাত সেমাইয়ের দাম তেমন বাড়েনি। গত বছর রোজার ঈদের আগে ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট চিকন সেমাই বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকায়, যা এবার ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি খোলা চিকন সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায়, যা গত বছরের ঈদ বাজারে বিক্রি হয়েছিল ১৫০-১৮০ টাকায়। ২০০ গ্রামের প্রতি প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, যা আগে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে, চিনির বাজারেও এবার ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। গত বছর ঈদুল ফিতরের সময় চিনির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৪০-১৫০ টাকা, যা এবার ১২০-১৩০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ চিনির দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমেছে। পোলাও চালের দামও কেজিপ্রতি ১২০-১৩০ টাকায় নেমেছে, যা গত বছরের তুলনায় ৩০-৪০ টাকা কম। এমনকি দুধ ও ঘি আগের দামে পাওয়া গেলেও এলাচের দাম বেড়েছে, কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা বেড়েছে ঈদ রান্নায় ‘কাঁচামাল’ হিসেবে ব্যবহৃত কাজু ও পেস্তা বাদামের দামও। যা রান্নার খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আনিসুর রহমান নামে এক ক্রেতা বলেন, এখনকার বাজারে সেমাই আর চিনির দাম বেশ স্বস্তিকর। গত বছরগুলোর তুলনায় এবার দাম কম থাকায় ঈদের আগেই আমরা বেশি পরিমাণে কিনে রাখতে পেরেছি। বিশেষ করে সেমাইয়ের দাম যা হয়েছে, তাতে মনে হয় না আর বেশি বাড়বে। চিনির দামও কমেছে, যেটা আমাদের মতো পরিবারের জন্য খুবই ভালো খবর। আমার মনে হয়, এই দাম ধরে রাখলে আরও ভালো হবে, তাহলে সবাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারবে ঈদের জন্য।
নাবিল আহমেদ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এবার সেমাই ও চিনির দাম দেখে খুবই ভালো লাগছে। গত বছরের তুলনায় দাম কম হওয়ায় ঈদে পরিবারের জন্য চাপ কিছুটা কমেছে। সেমাইয়ের দামটা যথেষ্ট সহনীয়, আর চিনিও সাশ্রয়ী হয়েছে। আশা করি, ঈদের আগে দাম বাড়বে না। এমন যদি হয়, তাহলে বেশিরভাগ পরিবারই সুবিধা পাবে। আমি এখনই কিছু পণ্য কিনে রাখছি, যাতে শেষ মুহূর্তে ঝামেলা না হয়।
অপরদিকে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততম বেচাকেনায় খুশি বিক্রেতারাও। সুগন্ধা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের বিক্রেতা ইকবাল করিম বলেন, বাজারে পণ্যের দাম এখন স্থিতিশীল রয়েছে। এদিকে ঈদকে ঘিরে ক্রেতাদের চাহিদা দেখেও বেশ ভালো লাগছে। সেমাই এবং চিনির দাম কম থাকার কারণে ক্রেতারা বেশি পরিমাণে কিনে নিচ্ছেন। আমরা ভালোভাবে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রেখেছি, যাতে ক্রেতাদের কোনো সমস্যায় না পড়তে হয়।
তিনি বলেন, শুরুতে আমাদের আশঙ্কা ছিল ঈদের শেষ সময়ে দাম কিছুটা বাড়তে পারে, তাই আমরা সব পণ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে কিনে রেখেছিলাম। কিন্তু এখন যেহেতু পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়েনি, আমরাও বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন মনে করিনি। আশা করছি ঈদের সময়েও বিক্রি ভালো হবে।
শরিফুল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে বাজারে কেনাকাটার ধুম চলছে। কারও সাথে কথা বলার সুযোগও পাচ্ছি না। ক্রেতারাও সবাই তাড়াহুড়া করছেন, কেনাকাটা শেষ করে তারাবি পড়তে হবে।
ক্রেতা সমাগমে সন্তুষ্টির কথা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, বেশি বেচাকেনা হলেও লাভ সীমিতই হচ্ছে। কারণ দাম কম থাকায় বেশি লাভের আশা করা যাচ্ছে না। কিন্তু বাজারে চাহিদা বেশি, তাই বিক্রি ভালোই হচ্ছে। শেষ সময়ের ভিড় আরও বাড়বে, আশা করছি।