বিডি ঢাকা ডেস্ক
টানা তিন দিন ধরে ট্রেনে যাত্রীদের দুর্ভোগ। রবিবারও স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। ঢাকামুখী ও ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ট্রেনই এদিন ২ থেকে ৭ ঘণ্টা দেরি করেছে। গাজীপুরের জয়দেবপুরে গত শুক্রবার তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সংঘর্ষই এই সূচি বিপর্যয়ের কারণ।
গাজীপুরের জয়দেবপুর হয়ে চলাচলকারী উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রায় সব ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে দিনে ৩০টির মতো ট্রেন চলাচল করে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের পথে চলে আরও ৩০টির মতো। এর সব কটিই দেরি করেছে। প্রায় ৬০টি ট্রেন অস্বাভাবিক দেরিতে ছেড়ে যায়। এর প্রভাবে পূর্বাঞ্চলের কিছু ট্রেনের সূচি এলোমেলো হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা পশ্চিমাঞ্চলে। রেলের পশ্চিমাঞ্চল ঢাকা বিভাগের একাংশ, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ নিয়ে গঠিত। মূলত এই অঞ্চলের ট্রেনগুলোই সূচি বিপর্যয়ে পড়েছে। রংপুর এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রাজশাহী রুটের সিল্ক সিটি ও বনলতা, জামালপুর রুটের অগ্নিবীণা ও ময়মনসিংহ রুটের বলাকা ট্রেন সবচেয়ে দেরিতে ছেড়েছে।
একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলার কারণে জয়দেবপুর ও ধীরাশ্রম স্টেশনে ট্রেনগুলোকে অপেক্ষায় রেখে একটি একটি করে চলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে দুর্ঘটনাস্থল পার করতে প্রতিটি ট্রেনের এক থেকে দেড় ঘণ্টা বেশি সময় লেগেছে। বেশি গরমের কারণে রেললাইন বেঁকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কায় গত ১৬ এপ্রিল থেকে ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণেও ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচলে কিছুটা বিঘ্ন ঘটে। দুর্ঘটনার পর দুটি ট্রেন লাইন থেকে সরাতে ও লাইনটি মেরামত করতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণে বিরক্ত যাত্রীরা। তাদের মতে, স্টেশনে এনে দিনভর বসিয়ে রেখে ভোগান্তি দেওয়া দায়িত্বহীনতা। যাত্রাবিলম্বের বিষয়টি অবগত করা রেলের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যাত্রীরা অভিযোগ করছিলেন, ট্রেন কখন আসবে, কখন ছাড়বে তা কেউ কিছু বলতে পারছিলেন না। ফলে বাসায় ফিরে যাওয়ার সুযোগও ছিল না। কোনো কোনো ট্রেন স্টেশনে ছিল। তাতে যাত্রী উঠে বসেও ছিলেন। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার লক্ষণ ছিল না।এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী জানান, উদ্ধার ও মেরামতে সময় লেগেছে। সূচি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।জানা গেছে, রেলকর্মীদের সংকেতজনিত ভুলে জয়দেবপুরে দুর্ঘটনা ঘটে শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে। এতে নয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়। আহত হন চারজন। শুক্রবার বিকালে উদ্ধারকারী ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। শনিবার বেলা ১১টার দিকে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন দুটি লাইন থেকে সরানো হয়। এরপর ওই লাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। সব মিলিয়ে একটি দুর্ঘটনার পর ট্রেন লাইন সচল করতে লেগেছে ৩১ ঘণ্টার বেশি। ওদিকে স্টেশনে স্টেশনে টিকিট কাটা যাত্রীরা ভিড় করেছিলেন। কারও কারও ট্রেন সময়মতো আসেনি। কারও কারও ট্রেন এলেও স্টেশনে বসে ছিল। কারও কারও ট্রেন ছেড়ে গিয়ে যাত্রাপথে থেমে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা।