বিডি ঢাকা ডেস্ক
রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় ১০টি দোকান ঘুরে ৭টিতেই পাওয়া যায়নি সয়াবিন তেল। তিনটিতে পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে না। এমনকি বোতলজাত তেলের গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ভোক্তারা। অনেকেই সয়াবিনের বিপরীতে সরিষার তেল নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একাধিক খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শরীফুল আলম জানান, শুরুতে তিনি একটি দোকানে এক লিটার সয়াবিন তেল নিতে চাইলে দোকানি বলেন— গত এক সপ্তাহ ধরে সয়াবিন তেলের কোনও সাপ্লাই নেই। তবে ৫ লিটারের কিছু বোতল আছে, যেগুলো থেকে চাইলে নিতে পারবেন। পরবর্তীতে আরও দুইটি দোকানেও তিনি সয়াবিন তেল কিনতে গিয়ে ব্যর্থ হন। অবশেষে সয়াবিনের বদলে সরিষার তেল কেনেন তিনি।
বনশ্রী এলাকায় গিয়ে শামীম আহমেদ নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের, যিনি কয়েকটি দোকান ঘুরে অবশেষে ১৭৫ টাকার তেল ১৯০ টাকায় কিনে বাসায় ফিরছিলেন।
শরীফুল আলম এবং শামীম আহমেদের দেওয়া তথ্যে মঙ্গলবার সকালে রামপুরা এবং বনশ্রী এলাকার অন্তত ১০টি দোকান ঘুরে দেখা হয়, যেগুলোর ৭টিতেই সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। এরপর বিকেলে আবারও বনশ্রী এলাকার সি ব্লকের ঐশী গ্রোসারি, সিকান্দার জেনারেল স্টোর এবং জিসান এন্টারপ্রাইজে গিয়ে একটি দোকানেও সয়াবিন তেল পাওয়া যায়নি। এরপর তিতাস রোড এলাকায় কয়েকটি দোকান ঘুরে দুইটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া যায়। তবে বোতলের গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১৯০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। এ ছাড়া খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে প্রতি লিটার ১৯৫-২০০ টাকায়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শরীফুল আলম বলেন, সামনে রোজা আসছে তাই বাজারে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। ৩ থেকে ৪টা দোকান ঘুরে অবশেষে সরিষার তেল কিনেছি, সেটাও বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এখনও তো রোজার বেশ দেরি, এতো আগেই যদি বাজারের এই অবস্থা হয়, তাহলে তিন-চারদিন আগে তো বাজারে ঢুকাই যাবে না।
তিনি বলেন, দেশে নতুন সরকার এসেছে, তাদের প্রতি আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তারা দৃশ্যমান কিছুই করতে পারেনি। এমনকি বাজার প্রসঙ্গে তাদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ব্যবসায়ীরা বেশি সুযোগ নিচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না। রোজার আগেই কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা জরুরি।
শামীম আহমেদ বলেন, বনশ্রীর অনেকগুলো দোকান ঘুরে অবশেষে একটি দোকানে পেয়েছি। সেখানেও বোতলের গায়ের মূল্য মুছে লিটারপ্রতি ১৯০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। বাধ্য হয়ে সেখান থেকেই কিনতে হয়েছে। রোজার এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি, এখনই যদি তেল না পাওয়া যায়, তাহলে আর কিছুদিন পর কী হয় বুঝতে পারছি না।
অপরদিকে বাজারে তেল নিয়ে এমন তেলেসমাতিতে ক্ষুব্ধ দেখা যায় বিক্রেতাদেরও। তাদের দাবি, ডিলার এবং মালিকপর্যায়ে অসাধু ব্যক্তিদের কারণে প্রতি রমজানের পূর্বেই বাজারে এমন চিত্র দেখা যায়। যে কারণে ক্রেতাদের নানা ধরনের খারাপ মন্তব্য শুনতে হয় বিক্রেতাদের।
রামপুরা এলাকার মুদি বিক্রেতা নাজমুল বলেন, রোজার আগে সরকারিভাবে দাম বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। তাই বাজার থেকে ডিলাররা তেল উঠিয়ে নিয়েছে। আর এ কারণে আমরাও তেল পাচ্ছি না। কিছু পেলেও সেগুলো বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। যার ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি নানাভাবে বিক্রেতাদের চাপে ফেলে তেল বিক্রি করছে। তেল পেতে হলে কোম্পানিগুলো তাদের ৮ থেকে ১০টি পণ্য নিতে বাধ্য করছে। সেক্ষেত্রে রূপচাঁদা তেল পেতে চাইলে ব্র্যান্ডটির ছোট-বড় সব সাইজের সরিষার তেল নিতে হচ্ছে। তীর সয়াবিনের সঙ্গে লবণ ও সব ধরনের গুঁড়া মসলা নিতে হচ্ছে। পুষ্টি কোম্পানির তেল নিতে চাইলে ওই ব্র্যান্ডের আটা-ময়দা নিতে হচ্ছে।
বনশ্রী এলাকার এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, চাহিদামতো সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানিগুলো ঠিকমতো তেল দিচ্ছে না। ডিলারদের পাঁচ কার্টন তেল অর্ডার দিলে এক থেকে দুই কার্টন পাওয়া যাচ্ছে। ফলে বাজারে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে।