শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৯:৫০ পূর্বাহ্ন

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদাকে বিদেশ নেওয়ার ইস্যুতে মাঠে বিএনপি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২১
  • ৪৪৩ বার পঠিত
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদাকে বিদেশ নেওয়ার ইস্যুতে মাঠে বিএনপি
ফাইল ফটো

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে স্থানান্তর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। দলটি বলছে, সরকার প্রধান ও আইনমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতার কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে সরকারের আইনি ক্ষমতা অসীম। সরকার চাইলেই তাদের দলীয় নেত্রীকে বিদেশ পাঠাতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার দাবি আদায়ে তৎপরতা দেখিয়েছে দলটি। খালেদা জিয়ার জামিন ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আগামীকাল শনিবার দেশব্যাপী গন-অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদে দেওয়া বক্তব্যে সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি না দিলে এবং সে ক্ষেত্রে কিছু ঘটে গেলে তারা পদত্যাগ করবেন।’

বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সংসদে আমরা স্পষ্ট করে বলেছি চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে অনুমতি দিতে হবে। সরকার না দিলে এবং নেত্রীর কিছু হয়ে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।’

খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই বলে আইনমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য রেখেছেন তার জবাবে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘৪০১ ধারায় সরকার খালেদা জিয়াকে শর্তযুক্ত করে মুক্তি দিয়েছে। আইনে বলা আছে, সরকার চাইলে যেকোনো শর্ত যুক্ত করতে পারে। অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার। বিদেশে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। অনুমতির বিষয়টি এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে।’

গতকাল রাতে টেলিফোনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার অনুমতি না দিলে পরে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা আমরা করতে পারি। কারণ সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছে না।’

সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জাতীয় সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। ৪০১ ধারায় সরকার চেয়ারপারসনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দিতে পারে। আসলে বিষয়টি সরকারের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। কারণ সরকারের ক্ষমতা আনলিমিটেড। আইনেই এই ক্ষমতা দেওয়া আছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিতে চায় না। বিষয়টি পরিষ্কার।’

খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো নয়। আমরা আবেদন করলাম কিন্তু সরকার দিচ্ছে না। এ অবস্থায় বিএনপিসহ দেশবাসীর এগিয়ে আসা উচিত। কারণ খালেদা জিয়া এ দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশের জন্য তার অবদান রয়েছে।’

এদিকে বএনপি নিজেরা নানা কর্মসূচি নেওয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানা গেছে। তার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছে। গত বুধবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছে। গত বুধবার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়াকে দেখতে গিয়েছিলেন। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দলমত-নির্বিশেষে সবাই মিলে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে অনুমতি দেয়।’

গুলশানে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেওয়া অমানবিক। কারণ তিনি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ। সরকার তাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দিলেও তিনি স্বাধীন জীবনে ফিরতে পারেননি। শর্ত থাকায় তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারছেন না।’

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ অবস্থা : চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া ৫৩ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখন তাকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে, যা তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের জন্য জীবনের ঝুঁকি ছিল।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া নতুন উপসর্গ নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার একটি বায়োপসি করা হয়। কিছুদিন বাসায় থাকার পর ১৩ নভেম্বর আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবার রক্তদানের পাশাপাশি তার এন্ডোস্কপিও করা হয়েছে।’

চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা করে খালেদা জিয়াকে সুস্থ করা সম্ভব নয় বলে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড বারবার বিএনপিকে জানিয়েছে। তারা তাকে বিদেশে উন্নত কোনো মেডিকেল সেন্টারে দ্রুত স্থানান্তরের কথা জানিয়েছে। মেডিকেল বোর্ড স্পষ্টভাবে বলেছে, খালেদা জিয়া এমন একটি অবস্থায় আছেন, তা এখন সমাধানযোগ্য। কিন্তু সময়োপযোগী চিকিৎসা দেওয়া না হলে তিনি যেকোনো মুহূর্তে ভিন্ন অবস্থায় যেতে পারেন। তখন আর কোনো চিকিৎসা কার্যকরের সুযোগ থাকবে না।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান প্রমুখ।

সংসদ থেকে পদত্যাগের হুমকি : গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) সিরাজ। এরপর দলটির সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন ও মো. হারুনুর রশীদ বক্তব্য দেন।

জি এম সিরাজ বলেন, “আমরা কয়েকজন এ সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, ‘এটা এ সংসদের জন্য অলংকার।’ আজকে তাই বলতে চাই প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যিকার অর্থে অলংকার হয়ে থাকি, তাহলে এ সংসদ অলংকারবিহীন করবেন না। আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত এমনও হতে পারে, ম্যাডাম যদি চরম অবস্থায় চলে যান, তাহলে আমাদের এই সংসদে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে। আমি এটাকে শর্ত দিচ্ছি না। এ সময় তার মাইক বন্ধ হয়ে যায়।”

এর আগে জি এম সিরাজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করতে চাই মানবিক কারণে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দু-এক দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে বিদেশে পাঠানো হোক। নয়তো কিছু একটা হয়ে গেলে এর দায়ভার আওয়ামী লীগকে আজীবন বহন করতে হবে। জামিনের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর ৪০১ ধারার দীর্ঘ বক্তব্য শুনেছি। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনলাম। যা সব দৈনিক পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন, রাগ বিরাগের বশবর্তী হবেন না। কিন্তু গতকাল তার বক্তব্যের সঙ্গে শপথের ভাষা সাংঘর্ষিক। এটা কি সঠিক না, বেঠিক?’

অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে জি এম সিরাজকে সমর্থন জানান বিএনপির এমপি মো. হারুনুর রশীদ। এর আগে বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে দলটির আরেক সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া কিডনি, লিভার, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। প্রধানমন্ত্রী অনেক মানবতা দেখিয়েছেন। আরেকটু মানবতা আমরা প্রত্যাশা করি।’

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়। এরপর প্রথমে পুরান ঢাকার বিশেষ কারাগার ও পরে কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় (বিএসএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য তারা সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়। এরপর আরও তিন দফায় তার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com