শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

হ্রদে ভাসলো বিজুর ফুল, এবার জলকেলির পালা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১ বার পঠিত

বিডি ঢাকা ডেস্ক

 

 

 

সবেমাত্র পূর্ব আকাশে উঁকি দিয়েছে সূর্য। তার লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে হ্রদের বুকে। এই ভোরে নানা বয়সি মানুষ ফুল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন ঘাটে। ডালায় থাকা রক্তজবা, রঙ্গণ গাদাসহ নাম না জানা বুনো ফুল কলা পাতায় সাজাতে ব্যস্ত সবাই। উদ্দেশ্য গঙ্গা দেবীর আরাধনার হ্রদের জলে ফুল নিবেদন।

এভাবেই বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণ উৎসবে মেতেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসলো বিজুর ফুল।

শনিবার (১২ এপ্রিল) সকালে কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙ্গামাটিতে শুরু হয়েছে বৈসাবির মূল আয়োজন। পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ১৯ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠীর জলকেলির মাধ্যমে শেষ হবে পাহাড়ের বৈসাবির আনুষ্ঠানিকতা।

মূলত পাহাড়ে বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায় বিভিন্নভাবে দিনটি উদযাপন করে থাকে। তবে এটি ‘ফুল বিজু’ নামে বেশি পরিচিত। রাঙ্গামাটির গর্জন তলী মধ্যম দ্বীপে  কাপ্তাই হ্রদের জলে গঙ্গা দেবীর আরাধনায় ফুল ভাসিয়ে এর উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার।

এসময় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেন, ‘আজকের এই পবিত্র দিনে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেছি। আমরা যাতে সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে সকল জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বসবাস করতে পারি।’

গর্জনতলী ঘাটে ফুল ভাসাতে আসা অমিয় ত্রিপুরা বলেন, ‘সকালে ফুল সংগ্রহ করে ঘর সাজিয়ে এখন ফুল ভাসাতে এসেছি। ফুল ভাসনোর মধ্যে দিয়ে পুোনো বছরের দুঃখ বেদনা গ্লানি পানিতে ভাসিয়ে দিলাম এবং নতুন বছর যেন সুন্দর হয়।’

রাজ বনবিহার ঘাটে ফুল ভাসিয়ে শ্রাবণী চাকমা বলেন, এটি পার্বত্য অঞ্চলের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। হ্রদে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি, ‘আগামী বছরটা যেন আরও সুখশান্তিতে কাটাতে পারি। পার্বত্য এলাকাসহ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হউক’।

অন্যদিকে রাজ বনবিহার ঘাটে কাপ্তাই হ্রদের জলে ফুল ভাসিয়ে বিজুর উদ্বোধন করেন রাঙ্গামাটির সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার। এসময় তিনি বলেন, পাহাড়ে বসবাসরত সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য আজকের দিনটি বিশেষ একটি দিন। কারণ এদিন থেকেই নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এই ফুল ভাসানোটা এখন সম্প্রীতির উৎসবে রূপ নিয়েছে।

হ্রদে ফুল ভাসিয়ে শ্রাবণী চাকমা বলেন, এটি পার্বত্য অঞ্চলের ঐহিত্যবাহী সামাজিক উৎসব। হ্রদে ফুল ভাসিয়ে গঙ্গা দেবীর কাছে প্রার্থনা করেছি, ‘আগামী বছরটা যেন আরও সুখশান্তিতে কাটাতে পারি। পার্বত্য এলাকাসহ সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হউক’।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাংলা বর্ষকে বিদায় জানানোর এ অনুষ্ঠান তাদের প্রধান সামাজিক উৎসব হিসেবে বিবেচিত। এই উৎসব চাকমা জনগোষ্ঠী বিজু নামে, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মানুষ সাংগ্রাই, মারমা জনগোষ্ঠী মানুষ বৈসুক, তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী বিষু, কোনো কোনো জনগোষ্ঠী বিহু নামে পালন করে থাকেন।

বৈসুকের ‘বৈ’ সাংগ্রাইয়ের ‘সা’ ও বিজু, বিষু ও বিহুর ‘বি’ নিয়ে উৎসবটিকে সংক্ষেপে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করা হয়। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর থেকে পাহাড়ের সব জনগোষ্ঠীকে সম্মিলিতভাবে উৎসবে একীভূত করার জন্য সংক্ষেপে এ নামটি প্রচলন করা হয়।

১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব ১৬ ও ১৯ এপ্রিল মারমা সম্প্রদায়ের জলকেলির মাধ্যমে শেষ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com