শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

৮১ দিন পর খালেদা জিয়ার বাসায় ফেরার মিছিলে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৩৯৯ বার পঠিত
নিজস্ব সংবাদদাতা : ৮১ দিন পর বাসায় ফিরেছেন খালেদা জিয়া। তবে তার বাসায় ফেরার সময় তার গাড়ির সঙ্গে আসা নেতা-কর্মীদের মিছিলে কোনও স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। সেসময় মানা হয়নি কোনও সামাজিক দূরত্ব। অনেকের মুখেই ছিল না মাস্ক।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে গুলাশানের ‘ফিরোজা’ বাসায় পৌঁছান খালেদা জিয়া। এর আগে সাড়ে সাতটায় এভারকেয়ার হাসপাতাল ত্যাগ করেন তিনি। তার গাড়ির সঙ্গে সহস্রাধিক নেতাকর্মী স্লোগান দিতে দিতে আসেন।
সেসময় অনেক নেতাকর্মী পায়ে হেঁটে, কেউ গাড়িতে এবং কেউ মোটরসাইকেলে করে আসেন। অনেক সময় তাদের বহরের কারণে খালেদা জিয়ার বাসায় পৌঁছাতে দেরী হয়ে যায়। সময়ের আলোর ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সরাসরি সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, সেসময় অনেক নেতাকর্মীদের মুখেই কোনও মাস্ক ছিল না। করোনা স্বাস্থ্যবিধিও মানছিলেন না অনেকে।
এর আগে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ড আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডা. মোহাম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ‘দেশব্যাপী করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে জানুয়ারিতে ৩৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মেডিকেল বোর্ড তাকে বাসায় নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হাসপাতালে যে ধরনের চিকিৎসা সুবিধা দেওয়া হয়েছে, তার সবকিছুই বাসায় রাখা হয়েছে।’
ডা. সিদ্দিকী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে আবার যে রক্তক্ষরণ হবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়া জরুরি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি, আপাতদৃষ্টিতে মেজর ব্লিডিংয়ের চান্স সম্ভবত থামানো গেছে। তারপর সিসিইউতে রেখে আমরা আরও ছয়দিন পর্যবেক্ষণ করি। তখনও দেখেছি, উনার আর ব্লিডিং হচ্ছে না। এরপর আমরা উনাকে শিফট করে কেবিনে নিয়ে আসি। এখনো তিনি কেবিনেই আছেন।
বেগম জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের এ সদস্য আরও বলেন, একটা কথা স্পষ্ট বলে রাখা প্রয়োজন, উনার মূল যে অসুখ সেটার যে প্রসিডিউর হাই-প্রেসারের টোটাল সাপোর্টেশনের জন্য বাইপাস ট্রেন তৈরি করে দেওয়া, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি। আমরা যেটা করেছি, দৃশ্যমান বড় যে বেসিকগুলো ফেটে যাচ্ছিল সেগুলোকে ব্যান্ডিং করেছি, ব্লক করা হয়েছে। উনার অবস্থা স্টেবল আছে। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে আবার যে ব্লিডিং হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন, বেগম জিয়ার প্রধান সমস্যা লিভার সিরোসিস। এই রোগের সর্বশেষ চিকিৎসা লিভার পরিবর্তন করা। কিন্তু আপাতত তিনি সেই শারীরিক অবস্থায় নেই।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজা হলে কারাগারে যেতে হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও তার সাজার রায় আসে। দেশে করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর খালেদার পরিবারের আবেদনে তাকে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। তবে তাতে শর্ত ছিল, তাকে দেশেই থাকতে হবে।
কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া ওঠেন গুলশানের বাসা ফিরোজায়। এরপর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রায় দুই মাস হাসাপাতালে থাকেন। এরপর আরও দুই দফা তাকে হাসপাতালে যেতে হয়।
৭৬ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী অনেকদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। সর্বশেষ গত ১৩ নভেম্বর ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসের কথা জানান চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার ‘সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই’ দাবি করে তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য কয়েক দফা আবেদন করেছিলেন তার ভাই। সাময়িক মুক্তির শর্তের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবারই তা নাকচ করা হয়। এবার লিভার সিরোসিস ধরা পড়ায় খালেদাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। তবে এবারও একই যুক্তিতে তা নাকচ করে বলা হয়, খালেদা জিয়াকে অনুমতি দেওয়ার ‘আইনি সুযোগ নেই’।
এভার কেয়ার হাসপাতালে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলে। গত ১০ জানুয়ারি তাকে সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com