বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বপ্ন দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর জন্য অপেক্ষা আর কত? সবধরনের জটিলতার অবসান চাইলো এলাকাবাসী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১
  • ১৯২ বার পঠিত
অনলাইন নিউজ : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বপ্ন পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। দীর্ঘ দিনের পর ৫ কোটি মানুষের মেঘা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তেমনি স্বপ্ন ছিল উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষের। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকা-ে জোয়ার আসবে।
দেশের মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮ জেলার জেলার পদ্মা নদী পারাপারে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানের চেয়ে মাওয়া-জাজিরা অবস্থান দিয়ে যাতায়তে বেশি সময় লাগবে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হলে রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও নড়াইলের একাংশ, গোপালগঞ্জ, যশোর এবং মাদারীপুর জেলার দূরত্ব কমানোর সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলী। তিনি জানান, পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার বিষয়টি চূড়ান্ত করেছিল সেতু বিভাগ। প্রথম পদ্মা যেমন প্রয়োজন, তেমনি দ্বিতীয় পদ্মা সেতুরও প্রয়োজন কোন অংশে কম নয় বলে জানালেন মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম সারায়োর ছানু।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দাবি ছিল পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর। সেতু হলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৮ জেলাবাসীদের দুর্ভোগ কমবে। আমরা দ্রুত রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবো। তিনি বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প নিয়েছিল সরকার। অথচ আজও তা আলোর মুখ দেখলো না। তিনি সব বাধা এড়িয়ে অবিলম্বে কাজ শুরুর আহ্বান জানান।
রাজবাড়ীর বাসিন্দা আয়নাল ফকির জানান, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য আমরা স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি।  তারপরেও সেতুর কোন খবর নেই, এটা দুঃখজনক। দেশের স্বার্থে  এবং জাতীয়  স্বার্থে সেতুটি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান আয়নাল ফকির।
এদিকে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সেতু বিভাগ বলেছিল ২০১৩ সালের শুরুতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। সময় পেরিয়েছে। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে গেছে আট  থেকে নয়টি বছর। তারপরেও আলোর মুখ দেখেনি সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে জনগণের ভেতরে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা ভাবছেন আদৌ কি এ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে? আবার সরকারের পক্ষ থেকেও কোন সাড়াশব্দ না থাকায় প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ অনেকটাই তামাদি হতে চলেছে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। এদিকে এ সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের ৯ বছর ৭ মাস পরেও কাক্সিক্ষত সাড়া না পাওয়া যায়নি। অগ্রগতিও নেই এ প্রকল্পের এবং কবে নাগাদ দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে সে সম্পর্কে সেতু বিভাগ কিছুই বলতে পারেনি। ফলে সরকারের এ মেঘা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবার কথা থাকলেও সে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। সংশ্লিষ্ট  সেতু বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ২০১১ সালের  ৪ নভেম্বর। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের অধীনে এ দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির *www.bba.gov.bd* করতে বলা হয় এবং আবেদনের মূল কপির সঙ্গে দুইটি ফটোকপি বাংলাদেশ ব্রিজ অথরিটির (বিবিএ) নির্বাহী পরিচালকের ঠিকানায় ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি দুপুর  ১২টার মধ্যে জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু ৯ বছর ৭ মাসেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
সেতুটি নির্মাণ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩টি জেলার প্রায় ৫ কোটি মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থাসহ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হতো বলে সংশ্লিস্ট মহলের অভিমত ছিল। এছাড়া গত ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারেও পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য জাপান-ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রথম সমীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) ও উন্নয়ন  প্রকল্প ছক (ডিপিপি)  গত ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট মাসে পরিকল্পনা কমিশন নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক, চীনসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহকে অর্থায়নের বিষয়ে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত  কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারকে কোনো টাকা দিতে হবে না বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ে কাজ শুরু করতে দরদাতাই অর্থের সংস্থান করবে। ফলে বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটে কোন চাপ পড়বে না। এক্ষেত্রে সফট লোন বা অপেক্ষাকৃত সহজ শর্তে অর্থসংস্থান করা হবে। এমন শর্ত রেখে ডিজাইন বিল্ট পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণ করা হবে। নির্মাণ কাজ শেষে সেতুর ওপর চলাচলকারী যানবাহন থেকে আদায়কৃত টোল দ্বারা দীর্ঘমেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করা হবে বলে মন্ত্রী জানান। মাওয়ায় পদ্মা সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতুর মূল কাঠামো দৃশ্যমান হওয়ার সংবাদের মধ্যেই আলোচনায় উঠে আসে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কথা।
জানা যায়, সেতু বিভাগের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ নৌরুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হবে। এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় না। তবে সেতু বিভাগের অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর (প্রসাশন) মো. মনিরুল আলম বলেন, প্রথম পদ্মা সেতু চালুর পর দ্বিতীয় সেতুর কাজ শুরুর একটি পরিকল্পনা আমাদের ছিলো। তবে সে বিষয়ে এখন আমাদের কোনো পরিকল্পনা নেই। ছয় দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ পিডিপিপি অনুমোদন করে। সেতুর নির্মাণ ব্যয় বহনের জন্য ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com