সাতক্ষীরা সংবাদদাতা : করোনাকালীন দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর এর মধ্যেই যেন হিড়িক পড়েছে বাল্যবিয়ের। করোনায় বন্ধ থাকা সাতক্ষীরার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়টির ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের খবর পাওয়া গেছে।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল লতিফ জানান, বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া অন্তত ৫০ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ের কথা জানা গেছে। এদের মধ্যে ১৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। কয়েকজনের বয়স ১৮ বছর পেরিয়েছে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
সাতক্ষীরায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রশাসনের উদ্যোগে নানা কর্মসূচির কারণে বাল্যবিয়ের হার কমে আসে। তবে করোনায় সেই হিসেব পাল্টেছে। ২০১৯ সালে আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীকে বাল্যবিয়ে না করার শপথ করানো হয়। সে সময় উপজেলা প্রশাসন থেকে ঘটা করে আয়োজন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি ডাটাবেজের আওতায় এনে লাল কার্ড প্রদান করা হয়। অথচ সেই স্কুলেই বাল্যবিয়ের হিড়িক পড়েছে।
বাল্যবিয়ের শিকার ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় মন বসত না মেয়ের। ভালো পাত্র পেয়েছিলাম বলে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। গরিব মানুষ, ভালো পাত্র হাতছাড়া করিনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক অবিভাবক বলেন, ‘পাড়ার এক বখাটে ছেলে মেয়েকে বিরক্ত করত। বিয়ের জন্য হুমকি দিত। কখন কী হয়ে যায়- এই ভয়ে ভালো পাত্র দেখে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।’ তবে মেয়ের বসয় ১৮ বছর পার হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলীপুর ইউনিয়নের একজন বিবাহ রেজিস্ট্রার বলেন, ‘কিছু অসাধু রেজিস্ট্রার নকল নিবন্ধন ফরমে সই নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করছেন। পরে যখন ছাত্রীদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে তখন রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। ফলে আইন করেও কাজ হচ্ছে না। কৌশলে বাল্যবিয়ে হচ্ছে।’
আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রউফ বলেন, ‘করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গোপনে কিছু বাল্যবিয়ে হয়েছে। তবে সংখ্যা এত বেশি নয়। তারপরও আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’
বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স সাতক্ষীরার কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ও শিশু নির্যাতন বন্ধে কাজ করছি। করোনার আগে জেলায় বাল্যবিয়ের হার অর্ধেকে নেমে এসেছিল। গত দেড় বছর করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সেই হার বেড়েছে। এ ব্যাপারে একটি জরিপক করব। আগামী মাসে প্রতিবেদন দিতে পারব।’
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে আমরা ওই বিদ্যালয়ের ৩৪টি বাল্যবিয়ের বিষয়ে জানতে পেরেছি। তবে এর মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থীর বয়স ১৮ বছরের বেশি। সেই হিসেবে বাল্য বিয়ে হয়েছে ২২টি। তার মধ্যে তিনজন পিত্রালয়ে ফিরে এসেছেন। তাদেরকে স্কুলমূখী করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
জেলার ৩০৭ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২১৪ মাধ্যমিক পর্যায়ের মাদ্রাসায় করোনার মধ্যে কী পরিমাণ ছাত্রীর বাল্য বিয়ে হয়েছে সেই হিসাব স্কুল খোলার পর জানা যাবে বলে জানান এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন।