শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন

দাউদকান্দি উপজেলায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণই তার নেশা, দুই নারীকে হত্যা

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১
  • ৩৮১ বার পঠিত

কুমিল্লা সংবাদদাতা : কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বরকোটা ভূঁইয়া বাড়ির রিকশাচালক শহীদুল্লাহর ছেলে আবদুল্লাহ আনসারী ওরফে মুন্না (২৩)। তার মা ঝর্ণা বেগম মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। ছোটবেলা থেকেই মুন্না কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন মানুষের আশ্রয়ে বড় হয়েছেন। বাবার সঙ্গে সম্পর্ক নেই। সর্বশেষ কুমিল্লা নগরীর পুলিশ লাইন এলাকায় একটি ফাস্টফুড দোকানের কর্মচারী ছিলেন।

এ পরিচয়ের আড়ালে মুন্না নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণের পর হত্যা করতো। এরই মধ্যে মুন্নার হাতে দুই নারী খুন হওয়ার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা। পিবিআইয়ের সদস্যরা একটি হত্যা মামলায় মুন্নাকে গ্রেফতারের পর অপর হত্যাকাণ্ডের তথ্য পায় তার কাছ থেকে। মুন্নার সহযোগী দ্বীন ইসলাম দ্বীনু (১৯) মাইক্রোবাস চালক। তার গাড়িতে করেই ওই নারীদের লাশগুলো ফেলা হয়েছে। তাকেও গ্রেফতার করেছে পিবিআই। দ্বীনু কুমিল্লা সদরের দুর্গাপুর গ্রামের মোস্তফা মিয়ার ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই নারীরা হলেন জেলার দাউদকান্দির বানিয়াপাড়া গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে পান্না আক্তার (২৮) ও কুমিল্লা সদর উপজেলার আমতলী গ্রামের সফিকুল ইসলামের মেয়ে লাইলী বেগম রিমা (২৬)। এক সন্তানের জননী লাইলীকে হত্যা করা হয়েছে গত ২ সেপ্টেম্বর। দুই সন্তানের জননী পান্না আক্তারকে হত্যা করা হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর।

মঙ্গলবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, পান্না আক্তারের হত্যার ঘটনায় গত ২৫ অক্টোবর সদর দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলে আমরা মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করি। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গত ৩১ অক্টোবর নগরীর রেইসকোর্স এলাকা থেকে সিরিয়াল কিলার মুন্নাকে গ্রেফতার করি। তার তথ্যে একই দিন রাতে গ্রেফতার করি তার সহযোগী দ্বীনুকে। এরপর আমরা মুন্নার মোবাইল নম্বরের সঙ্গে লাইলী বেগম রিমার মোবাইল নম্বরের যোগসূত্র খুঁজে পাই। কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না দু’টো হত্যাকাণ্ডের কথাই স্বীকার করেছে। সোমবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তারা।

মো. মিজানুর রহমান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে মুন্না জানিয়েছে ওই নারীদের সঙ্গে প্রথমে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন তিনি। এরপর তাদেরকে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে এনে প্রথমে ধর্ষণ এবং পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ ফেলে দিতেন মহাসড়কের পাশে। দ্বীনুর মাইক্রোবাসে করে পান্নার লাশ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ থানার গোপিনাথপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়। লাইলীর লাশ ফেনী সদরের শর্শদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, তার লাগাম টেনে ধরতে না পারলে কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটাতো সে। তার সঙ্গে আরও অন্তত তিনজন নারীর একইভাবে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠার প্রমাণ পাওয়া গেছে। যারা ছিলো মুন্নার পরবর্তী টার্গেট।

পান্না আক্তারের মা নার্গিস আক্তার জানান, পান্নাকে চান্দিনা উপজেলার বেলাশহর গ্রামে বিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তার সাত বছর ও আড়াই বছর বয়সী দুটি ছেলে আছে। তার স্বামী প্রবাসে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা কেউই তার সাথে মুন্নার প্রেমের বিষয়টি জানতাম না। তবে আমার অনেক টাকা ঋণ ছিল। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে প্রায় ১১লাখ টাকা আমি পান্নাকে দেই। ভাবলাম, ওই টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করবো। কিন্তু প্রেমের ফাঁদে ফেলে মুন্না তার থেকে ওই টাকা আত্মসাতের পর তাকে হত্যা করে।

পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হিলাল উদ্দীন আহমদ জানান, দুইমাস পূর্বে মুঠোফোনে মুন্নার সাথে পান্নার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর দুজনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও গড়ে ওঠে।  মুন্না পান্নার কাছে টাকা দাবি করে। কিন্তু চাহিদামাফিক টাকা না পাওয়ায় তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয় সে। একপর্যায়ে হত্যা করে সদর দক্ষিণের গোপীনাথপুরে সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজের পাশে তার মরদেহ ফেলে দেয়।

এছাড়া মুন্না তার বন্ধু সজীবের সহায়তায় লাইলির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ২ সেপ্টেম্বর লাইলি ২০ হাজার টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণের ঝাগরজুলি এলাকায় মুন্নার সাথে দেখা করতে যায়। মহাসড়কের ঝাগরজুলি এলাকা থেকে লাইলিকে অপহরণ করে তারা। এসময় দ্বীনুর সহায়তায় তাকে মাইক্রোবাসে তোলে মুন্না। পথে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। মরদেহ ফেনীর শর্শদী এলাকায় মহাসড়কের পাশে ঝোপে ফেলে দেয়। লাইলি এক ছেলে-এক মেয়ের জননী।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com