অনলাইন নিউজ : চলমান ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতার ‘শঙ্কা’ নিয়ে চতুর্থ ধাপে ৮৩৮ ইউপিতে রবিবার সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে ৩৮ ইউপিতে। বাকি ইউপিতে ভোট হবে ব্যালট পেপারে।
ইতিমধ্যে ভোটের আগে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনী প্রচারণার সময়ে প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, হামলা এবং দফায় দফায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। নির্বাচনের প্রচার বা নির্বাচনী কার্যক্রমে সংসদ সদস্য ও সরকারি সুবিধাভাগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ভোলায় দুই ইউপি সদস্য প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৫০ জন আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ক্রসফায়ারের হুমকিসহ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প দখলের অভিযোগ উঠেছে। প্রচারণার সময় মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ঝিনাইদহে। নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে যশোরে। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতা জেরে চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মীর হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা ঘটেছে। লক্ষ্মীপুরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাত্রলীগ নেতাকে তুলে নিয়ে মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
শনিবার ভোটের আগের দিন কুমিল্লার আদর্শনগর থেকে ২৯টি ককটেল, ৭টি রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত জুনে শুরু হওয়া তৃণমূলের এ ভোট এখন পর্যন্ত নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ হারায় ৭৩ জন।
এসব বিষয়ে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার শনিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি সব সম্পন্ন হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে সমস্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কেন্দ্রে পৌঁছে যাবে।’
সহিংসতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘরে ঘরে প্রতিযোগিতা হয়। ভোটের দিন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে।’ সুষ্ঠু ভোটের প্রত্যাশা করেন তিনি।
ভোটের মাঠে সহিংসতা বিরাজ করছে জানিয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশন ভিন্ন বাস্তবতায় আছে। মাঠে কি ঘটছে তার সাথে তাদের সংযোগ নেই। সহিংসতার অবসান ঘটার কোনো আলামত দেখছি না। তবে এটা বন্ধ হওয়া জরুরি।’
ইসির প্রতি ‘অনাস্থা’ দেখিয়ে তৃণমূলের এ ভোটে দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। দেশের অন্যতম বড় এই দলটি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় আওয়ামী লীগ এবং দলের বিদ্রোহীরা নিজেরাই সংঘাতে জড়াচ্ছেন। বিএনপি নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেক জায়গায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু ভোটের মাঠে স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা যাচ্ছে না। আধিপত্যের কারণে বিনাভোটে জয়ের রেকর্ডও হয়েছে এবার। পঞ্চম ধাপ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজারের বেশি জনপ্রতিনিধি বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ৩৫৩ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ভোটের প্রয়োজন হয়নি।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, দেশের ৮৪০ ইউপিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল ২৩ ডিসেম্বর। এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় ভোটের তারিখ তিন দিন পিছিয়ে ২৬ ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল।
চতুর্থ ধাপে ভোটের আগেই তিন পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২৯৫ জন। চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮জন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১২ জন। সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ১৩৫ জন।
দেশের ৫৮ জেলার ১১৮ উপজেলায় গত শুক্রবার মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে আগামী ২৭ ডিসেম্বর সোমবার পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এছাড়া শনিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দিনগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত ট্র্যাক-পিকআপ চলাচল বন্ধ থাকবে। আরেক নির্দেশনায় শনিবার থেকে ভোটগ্রহণের দিন রবিবার মধ্যরাত পর্যন্ত লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত নৌযান এবং স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সাংবাদিক, নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ জরুরি সেবার কাজে নিয়োজিতদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
ইসির দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ২২জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভোটের দায়িত্বে থাকবেন। এছাড়া প্রতি ইউপিতে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতি তিনটি ইউপিতে তিনটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া প্রতি উপজেলায় র্যাবের দুইটি মোবাইল টিম ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স, প্রতি উপজেলায় বিজিবি’র দুইটি মোবাইল ফোর্স (দুই প্লাটুন), একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন), প্রতি উপকূলীয় উপজেলায় কোস্টগার্ডের দুইটি মোবাইল টিম (দুই প্লাটুন) ও একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স (এক প্লাটুন), প্রত্যেক উপজেলায় একজন করে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত রয়েছে।
চতুর্থ ধাপের এ ভোটে চেয়ারম্যান পদে তিন হাজার ৮১৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে নয় হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ জন প্রার্থী ভোটের লড়াই করবেন। ৯ হাজার ২২৪টি ভোটকেন্দ্রের ৪৯ হাজার ৮৩২টি ভোটকক্ষে এক কোটি ৬২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৬০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ইতিমধ্যে তিন ধাপের ভোটগ্রহণ শেষ করেছে ইসি। পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউপিতে ৫ জানুয়ারি এবং ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে ৩১ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।