শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন

বাণিজ্যমেলার স্থান পরিবর্তনেও কমেনি ভোগান্তি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২২
  • ২০৭ বার পঠিত
‘আগের বাণিজ্য মেলাই ভালা আচিলো। এহন কি হইলো। আইতে কষ্ট। যাইতে কষ্ট। মানুষের কি যে ভিড়। উঠতে বসতে ঠেলাঠেলি। আর ভিতরে ঢুইক্যা স্টলই খুঁইজ্যা পাই না। জায়গা বড় হইছে তয় দোহান এককেবারে কম।’ গতকাল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা থেকে কেনাকাটা করে বের হয়ে কথাগুলো বলছিলেন সাখাওয়াত হাসান (৩৮)।
বছরের প্রথম ছুটির দিনে মোহাম্মদপুর থেকে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে পরিবারসহ মেলায় এসেছিলেন তিনি। ঢাকা থেকে মেলায় যাতায়াত করার একমাত্র মাধ্যম ৩৫টি বিআরটিসি বাস। আর বাণিজ্য মেলার নতুন ঠিকানা পূর্বাচলে স্টলের সংখ্যা অন্যান্য বারের থেকে কম দেখতে পেয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সপ্তম দিনে মেলা ঘুরে দেখা গেছে, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে, কেউবা বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন মেলায়। স্টলে স্টলে ঘুরে নানা পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। কেউবা মেতেছেন আড্ডায়, তুলছেন ছবি। এ যেন ভোগান্তি মাড়িয়ে হাজারো মানুষের সরব উপস্থিতি। তবে পণ্য কেনার চেয়ে ঘুরে দেখতেই বেশি সময় পার করছেন তারা। মেলার সব দোকানের চেয়ে পোশাক ও খাবারের দোকানে সাধারণের ভিড় বেশি।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন রাহাত রাব্বি। পুরান ঢাকা থেকে বাণিজ্য মেলায় ঘুরতে এসেছেন। এখনও হাতে সময় আছে তাই দেখতে এসেছেন। তিনি জানান, অন্যান্য বছরের থেকে এ বছরের মেলায় অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। এখানে সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় স্টল রাখা হয়েছে তাতে করে স্বল্প সময়েই কেনাকাটা করা যাচ্ছে। তবে ঠিক যে কারণে এবারের বাণিজ্য মেলা ঢাকা থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তরিত করা হয়েছে সেটার একেবারে সারশূন্য অবস্থা। ভোগান্তিও বেড়েছে দ্বিগুণ।
মহামারি করোনার কারণে এক বছর বন্ধ ছিল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ)। পূর্বাচলের নতুন ঠিকানায় আবার শুরু হয়েছে এ মেলা। মেলার গত ৬ দিনে তেমন একটা ক্রেতা-দর্শনার্থীর দেখা পাননি বিক্রেতারা। অলস সময় পার করলেও মেলা শুরুর সপ্তম দিনে জমে ওঠে। ছুটির দিন হওয়াতে শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই ক্রেতা দর্শনার্থীরা মেলায় প্রবেশ করতে শুরু করে। মেয়েদের ড্রেস ও কসমেটিকসের দোকান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সুমু খাতুন নামে একজন বলেন, আজ অনেক ভালো লাগছে। গত কদিনে মেলায় তেমন একটা ক্রেতা দেখতে পাইনি। আজ সকালেও ফাঁকা ছিল। কিন্তু দুপুরের পর মানুষ আসতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত (সন্ধ্যা) অনেক ক্রেতা পেয়েছি। আশা করি, বাকি দিনগুলোতেও ভালো সাড়া মিলবে।
অন্যদিকে মেলায় আসা ক্রেতা-দশনার্থী ও বিক্রেতাদের একটা বড় অংশ অভিযোগ করে বলেন, যাত্রাপথে পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। ঢাকা থেকে মেলায় আসতে হলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে সরাসরি বাণিজ্য মেলাতে আসার একমাত্র মাধ্যম বিআরটিসির বাস। টিকেট কাটতে দীর্ঘ লাইন। টিকেট কাটা শেষে গাড়িতে উঠতেও হুড়োহুড়ি। মাইকিং করে সবাইকে সিরিয়ালি গাড়িতে ওঠার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও কেউ কথা শুনছেন না বলে বাসের হেলপার-চালকরা জানান। নাকমুখ মাস্ক ঢেকে হাঁটতে হাঁটতে মেলায় প্রবেশ করছেন মৌটুসি তাবাস্মুম। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, আব্বু গ্রাম থেকে টাকা পাঠিয়েছেন- ছোট ভাইয়ের ব্লেজার কেনার জন্য। এ জন্য আজ ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় মেলায় এসেছি। প্রচণ্ড জ্যামে দূরেই নেমেছি। হেঁটে হেঁটে মেলায় যাচ্ছি। তবে যারা প্রাইভেটকার বা নিজস্ব পরিবহনযোগে মেলায় এসেছেন তারা কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মেলায় পৌঁছতে পেরেছেন। তাদের একজন রুহুল আমিন। ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে মেলার অন্যতম আকর্ষণ বঙ্গবন্ধু কর্নারে ঘুরছিলেন।
তিনি জানান, বিজয়ের পঞ্চাশে শুরু হওয়া এ মেলা নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। ছোট্ট দুই মেয়ের ইচ্ছে বাবার সঙ্গে মেলায় ঘুরবে। তাই সব ব্যস্ততা ছেড়ে আজ আসা। এবারের বাণিজ্য মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে এক ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। মেলায় প্রবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকার টিকেট কাটতে হবে। শিশুদের জন্য টিকেটের মূল্য ২০ টাকা। তবে টিকেট কাটার পরও নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসারে টিকেট দেখা হয় না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com