অনলাইন নিউজ : দৈনিক সময়ের আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এবং ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাবীব রহমান (৩৪) আর নেই (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। বুধবার (১৯ জানুয়ারি) রাত আড়াইটার পর রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মোটরসাইকেল আরোহী সাংবাদিক হাবীব রহমান দুর্ঘটনা কবলিত নাকি হত্যার শিকার তা নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। তার ব্যবহার করা মোটরসাইকেলটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
হাবীব রহমান সময়ের আলোতে আওয়ামী লীগ বিটে কর্মরত ছিলেন। তার সম্পূর্ণ নাম হাবীবুর রহমান। বর্তমানে তার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রয়েছে।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সংবাদকর্মী হাবীব রহমানের নামাজে জানাজা ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি (ডিআরইউ), সময়ের আলোর কার্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। পরে মরদেহ গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায় নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
সময়ের আলোর সংবাদকর্মীরা জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তারা ঢামেক হাসপাতালে ছুটে যান।
হাবীব রহমানের মোটরসাইকেলটি হাতিরঝিলের বেগুনবাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মামুন সোহাগ।
সময়ের আলোর নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ বলেন, এটা দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড, বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
হাতিরঝিল থানার এএসআই কায়েস উদ্দিন বলেন, রাত ২টা ৩৮ মিনিটে রাসেল নামের এক পথচারী ৯৯৯-এ ফোন করে দুর্ঘটনার খবর দেন। খবর পেয়ে দ্রুত আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ততক্ষণে কে বা কারা সাংবাদিক হাবীব রহমানকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যায়। দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল তখনো পাহারা দিচ্ছিলেন পথচারী রাসেল, মোটরসাইকেলটি হাতিরঝিল থানায় নেওয়া হয়েছে।
পথচারী রাসেল ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উল্লেখ করে কায়েস উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানার এসআই মাসুদ খলিফাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এসআই মাসুদ খলিফা এ প্রসঙ্গে বলেন, হাবীব রহমানের মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নাকি অন্য কোনো কারণে তা তদন্তের পর বলা যাবে।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া জানান, ময়নাতদন্তের জন্য হাবিব রহমানের লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।
এদিকে হাবীব রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। দৈনিক সময়ের আলোর সহকর্মীরাও শোকস্তব্ধ। দুর্ঘটনায় তার মৃত্যুর খবর পেয়ে শেষরাতেই ঢামেকে ছুটে যান সময়ের আলোর নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদ সহ অন্যান্য সহকর্মীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর হাবীব রহমান সময়ের আলোতে যোগদানের আগে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। দৈনিক সময়ের আলোর হয়ে সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন করেছিলেন তিনি। সাড়াজাগানো প্রতিবেদনের জন্য তিনি সময়ের আলোর ‘মাসসেরা রিপোর্টার’ সম্মাননাও পেয়েছিলেন।
হাবীব রহমান ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
হাবিব রহমানের স্থায়ী ঠিকানা কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। তার বাবার নাম মোহাম্মদ পিয়ার মিয়া। বর্তমান বাসা হাতিরঝিল এলাকার ৫/এ জোহরা মঞ্জিল। ব্যক্তিগতজীবনে তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। হাবিব বাবা মায়ের বড় সন্তান এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ হতে ২০১৩ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে বেশ কিছু গণমাধ্যমে কাজ করেন তিনি।
শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন হাবীব। পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ বিটেই সাংবাদিকতার শুরু। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বেশ কয়েকবার নির্বাচন করেন তিনি। প্রতিবারই বিজয়ী ছিলেন সদা হাস্যজ্জ্বল এই সাংবাদিক। প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পরবর্তী নির্বাচনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বিজয়ী হন তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..