শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন

কনডেম সেলে যেমন আছে প্রদীপ-লিয়াকত আলী

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
  • ৩০৯ বার পঠিত
কনডেম সেলে যেমন আছে প্রদীপ-লিয়াকত আলী
ফাইল ফটো
অনলাইন নিউজ : জানালাহীন সরু একটি কক্ষ। সাধারণ প্লাস্টার করা মেঝে। সেখানেই ঘুমানো ও বিশ্রামের জায়গা। রুমের ভেতরেই একপাশে সিঁড়ি দিয়ে উঁচু করা স্থানে সংযুক্ত বাথরুম। কক্ষে বৈদ্যুতিক আলো থাকলেও নেই সিলিং ফ্যান। এ বর্ণনাগুলো কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য সংরক্ষিত একটি ‘কনডেম সেলের’।
কক্সবাজার জেলা কারাগারে এমন কনডেম সেলেই এখন ঠাঁই হয়েছে এক সময়ের দুর্দান্ত প্রতাপশালী টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্তকৃত ওসি ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর। সোমবার বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায়ে পুলিশের সাবেক এ দুই কর্মকর্তার ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর ঠাঁই পাওয়া কনডেম সেলে প্রদীপ ও লিয়াকত কঠিন সময় পার করছেন।
কারা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রায়ের পর সোমবার রাতে প্রথমবারের মতো কয়েদির পোশাক পরে ফাঁসির আসামিদের জন্য বরাদ্দকৃত কনডেম সেলে প্রবেশ করতে হয়েছে প্রদীপ ও লিয়াকতকে। এ সময় বিমর্ষ-চিন্তিত ছিলেন দুজনই। ফাঁসির রায়ের পর প্রথম রাতটিতে অনেক সময় পর্যন্ত কনডেম সেলেই পায়চারি করেন তারা। এমন বাস্তবতা ও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা প্রথম রাতে অনেকটাই বিমর্ষ ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এমনকি রায়ের পরপর তাদের কারাগারে নেওয়া হলে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির নির্ধারিত পোশাক পরার বিষয়ে খানিকটা গড়িমসি করেছিলেন প্রদীপ কুমার। পরবর্তী সময়ে বুঝিয়ে বললে তিনি পোশাক পরিধানসহ বাকি প্রক্রিয়াও অনুসরণ করেন। লিয়াকত এসব নিয়ে খুব বেশি ঝামেলা করেননি। তবে লিয়াকতই তুলনামূলক বেশি চিন্তিত ছিলেন।
এ ছাড়া সিনহা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর ছয় আসামিকে কয়েদির পোশাক পরিয়ে কারাগারের বিভিন্ন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। এ ছাড়া খালাস পাওয়া সাতজনকে সোমবার রাতেই কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় বলে জানা যায়।
কক্সবাজারের জেল সুপার মো. নেছার আলম  জানিয়েছেন, সোমবার মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার রায়ের পর সন্ধ্যায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে পুলিশভ্যান কারাগারে পৌঁছায়। এরপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীকে অন্য আসামিদের থেকে আলাদা করা হয়। তাদের জন্য কারাগারে দুটি কক্ষকে কনডেম সেল ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়েছে। একটি কনডেম সেলে একজন আসামিই থাকেন। সোমবার রাত থেকেই তারা সেখানে দুটি আলাদা সেলে একাকী রয়েছেন।
তিনি জানান, কক্সবাজার জেলা কারাগারে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের জন্য আলাদা কোনো কনডেম সেল নেই। এই কারাগারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এলে কিছু কক্ষকে কনডেম সেল ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়। এ ছাড়া প্রদীপ ও লিয়াকতকে জেল কোড অনুযায়ী প্রতিদিন খাবার দেওয়া হয়েছে। তারা রাতে খাবারও খেয়েছেন।
তিনি আরও জানান, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলী এতদিন কারাগারে ভিআইপি হাজতি হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছিলেন। ফাঁসির আদেশ পাওয়ার পরপরই তাদের সেই সুবিধাগুলো বাতিল করা হয়েছে।
কনডেম সেল যেমন হয় : কারাগারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, কনডেম সেল মূলত নিঃসঙ্গ, একাকী রাখার জন্য ছোট্ট একটি কক্ষ, যেখানে একজন মানুষের সার্বক্ষণিক থাকা ও ঘুমানোর জন্য দৈনন্দিন যা যা প্রয়োজন সবই থাকে। খাট-টেবিল থাকে না, ফলে বিশ্রাম ও ঘুমানোর জায়গা মেঝেতেই। তিনটি কম্বল (শীতকালে প্রয়োজনে বেশি) এবং একটি বালিশ দেওয়া হয়। প্লেট-বাটি, সাবান, ব্রাশ-টুথপেস্ট সরবরাহ করা হয়। কক্ষটি অন্তত ছয় ফুট প্রশস্ত হয়ে থাকে। সেই কক্ষে কোনো জানালা থাকে না। কক্ষের এক প্রান্তে উঁচু জায়গা তৈরি করে বাথরুমের ব্যবস্থা রাখা হয়। সেখানে গোসল করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
ফাঁসির আসামিদের খাবার : কারা সংশ্লিষ্টরা জানান, ফাঁসির আসামিরাও সাধারণ বন্দিদের মতোই খাবার পেয়ে থাকেন। সকালে সপ্তাহের পাঁচ দিন রুটি ও সবজি (একদিন সুজি) এবং দুই দিন খিচুড়ি দেওয়া হয়। দুপুরের খাবারে ভাতের সঙ্গে নিয়মিত ডাল ও সবজি থাকে। তার সঙ্গে গরুর মাংস বা খাসির মাংস কিংবা মাছ যেকোনো একটি দেওয়া হয়। তবে সপ্তাহে পালাক্রমে মাছ-মাংস দেওয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া রাতের খাবার ভাতের সঙ্গে নিয়মিত সবজি ও ডালের পাশে মাঝেমধ্যেই গরু, খাসি বা মাছের মাথার মুরিঘণ্ট দেওয়া হয়।
সিনহা হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত যারা : মেজর সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত মোট ১৫ আসামির মধ্যে দুইজনের ফাঁসি এবং ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি সাতজন খালাস পেয়েছেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন- টেকনাফ মডেল থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং টেকনাফ থানাধীন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন- বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কনস্টেবল রুবেল শর্মা, কনস্টেল সাগর দেব এবং পুলিশের সোর্স ও সাজানো মামলার বাদী-সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আইয়াছ উদ্দিন।
খালাস পেয়ে কারামুক্ত যারা : সিনহা হত্যা মামলার রায়ে আদালত অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাসের আদেশ দিয়েছেন সাতজনকে। সোমবার রাতেই তারা কারামুক্ত হয়েছেন। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এপিবিএনের এসআই শাহজাহান মিয়া, কনস্টেবল রাজিব হোসেন ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ইমন এবং বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই লিটন মিয়া, শাফানুর করিম, কামাল হোসেন আজাদ ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহাকে। সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর মেজর সিনহা কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। সেখানেই ওসি প্রদীপে ‘ক্রসফায়ার’ বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম জেনে ফেলার জেরে পরিকল্পিত হত্যার শিকার হন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com