বিডি ঢাকা অনলাইন ডেস্ক: পদ্মা গার্ডেন এলাকায় চটপটি দোকানের মালিক আমিনুল ইসলাম নান্টু
সানর্বোড দিয়ে চেয়ার ভাড়া দিচ্ছেন তিনি।
স্টাফ রির্পোটার : শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- রাজশাহীবাসীর জন্য সব সময়ের বিনোদনের
সেরা ঠিকানা এই পদ্মাপাড়। নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশে আনন্দ ভাগাভাগি
করে নিতে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিনোদন পিপাসুদের ঢল নামে এই
পদ্মাপাড়ে। সকাল নেই, দুপুর নেই, সব সময় পদ্মাকে ঘিরে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত
থাকে পদ্মারপাড়। আর এই পদ্মা নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠছে অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
তাদের কারণে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে নির্মল বিনোদনের জন্য আসা
মানুষদের।
রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা নদীর পাড় ঘুরে দেখা যায় পুরো পাড় ঘেঁষে ‘ব্যাঙের ছাতার’
মতো গজিয়ে ওঠা চটপটি-ফুচকা, পেয়ারা মাখার দোকান,বাদামওয়ালা, চা-কফির
দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য। এসব
ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় ভ্রমণপিপাসুরা। চেয়ার পেতে পাড় দখলে নিয়েছে তারা।
এসব ব্যবসায়ীর উৎপাতে নদীর পাড় ঘিরে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের
পেতে রাখা চেয়ারগুলো যেন মানুষ ধরার ফাঁদ! সেই চেয়ারে না বসলে সহজে ফিরে আসাই
এখন মুশকিল। আর চেয়ারে বসলেই গুনতে হয় বিল। নদীর পাড় ঘিরে চেয়ার পেতে এখন যেন
ডাকাতি চলছে। পুরো পাড় ঘিরে চেয়ার পাতা। পাড় সংলগ্ন রাস্তায় চেয়ার বসিয়ে
হাঁটা-চলা এবং অনেক জায়গায় বসার জায়গা পর্যন্ত রাখা হয়নি।
পদ্মা গার্ডেন এলাকায় আমিনুল ইসলাম নান্টুর চটপটি দোকানে প্রতি ঘন্টায় (৪
চেয়ারে) একশত টাকা চেয়ার ভাড়া। চেয়ারে বসলে আবার এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে
পণ্য কিনতেও বাধ্য করা হয়। টাকা দিতে ও পণ্য কিনতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্ব্যবহার ও
অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ফলে মানুষ পদ্মাপাড়ে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির
শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের তৈরি করা বিনোদনকেন্দ্রের পাশে এ ধরনের
প্রতিষ্ঠান গড়ার হিড়িক পড়ে গেছে। সব মিলিয়ে শহরের বিপরীতে পদ্মার পাড়ে এ রকম
শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।
মহানগরীর পঞ্চবটি আই বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর টি-বাঁধ পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে ,
রাজশাহীতে হাতেগোনা কয়েকটি বিনোদন স্পট থাকায় মানুষের পছন্দের তালিকায়
এখনও সবার ওপরেই রয়েছে পদ্মাপাড়। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কাছেই সমান পছন্দ
পদ্মা। তাই করোনা আতঙ্কের মধ্যেও বিনোদন পিপাসুরা ভিড় করছিল সেখানে। এতে
পদ্মাপাড়ে বাদাম, চটপটি থেকে শুরু করে ফুটপাতের সব দোকানগুলোর ব্যবসাও চলছে। এ
ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় চেয়ার ভাড়ার প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।
এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীর ধারের পরিত্যক্ত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলেন।
প্রতিদিন বিকেলে সেখানে এখন মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যার পর এগুলোয় আলো ঝলমলে
পরিবেশ তৈরি হয়। তরুণ-তরুণীরা ভিড় করেন সেখানে।
গত বুধবার সরেজমিন পদ্মা গার্ডেন এলাকায় চটপটি দোকানের মালিক আমিনুল
ইসলাম নান্টু সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, প্রতি ঘন্টায় একশত টাকা
চেয়ার ভাড়া দিতে এখনে আসলি। তাঁর দাবি, এই জায়গায় তাঁদের পরিশ্রম রয়েছে।
নিজে গায়ে খেটেছেন। শ্রমিক নিয়ে কাজ করেছেন। তারপর জায়গাটি দোকানের মতো
হয়েছে। সন্ধ্যায় একটা মনোরম পরিবেশ তৈরি হয়। এখানে কেউ কোনো অসামাজিক
কাজ করতে চাইলে তাকে প্রতি ঘন্টায় ৫শত টাকা চেয়ার ভাড়া দিতে হয়।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বললেন, ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মাটি কেটে তিনি
জায়গা বেঁধেছেন। তাঁর ভাষ্য, সবাই চেয়ার ভাড়া দেয়, তাই তিনিও করেছেন।
অন্যদিকে পদ্মার টি-বাঁধের চটপটিসহ অন্যন্ন ব্যবসায়ীদের দাবি, পদ্মাপাড়ে তাদের
চেয়ারেই ব্যবসা চলে। এই ব্যবসা করে তাদের সংসার চলে। সামনের দিকে চেয়ার না দিলে
বেড়াতে আসা লোকজন চেয়ারে বসে না এবং তাদের চটপটিও খায় না। এজন্য তারা
বাঁধের সামনের দিকে চেয়ার বসিয়ে ব্যবসা করছেন।
পদ্মা গার্ডেনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া এলাকার
বাসিন্দা আহমদ হোসেন বলেন, চটপটিওয়ালাদের অবৈধভাবে দখলের কারণে বাঁধের ওপর
দাঁড়িয়ে কিংবা বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। নদীপাড়ে পা রাখলেই নানা
ধরনের বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। চেয়ারে বসলেই তাদের চটপটি ও ফুচকাসহ কিছু না
কিছু খেতে হয়। না খেলে বা তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে অস্বীকৃতি জানালে
দুর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে মানুষ
অতিষ্ঠ। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলছে। মনে হচ্ছে নদীতীরে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহীর তরুণ ও সামাজিক সংগঠনগুলো বলছেন, ‘আমরা চাই না যে
রাজশাহীর পর্যটন কেন্দ্রগুলো দখল আর দূষিত হয়ে যাক। তাই পদ্মাপাড়ের পরিবেশ,
প্রাণবৈচিত্র্য ও সৌন্দর্য্য সুরক্ষায় দখল ও দূষণমুক্ত এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করা দাবিসহ স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার
মাধ্যমে দাবি বাস্তাবায়ন করবে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন তারা।