অনলাইন নিউজ : ঢাকায় বনানী কবরস্থানে স্ত্রীর পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হতে চেয়েছিলেন ৫২‘এর মহান ভাষা আন্দোলনের অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এর রচয়িতা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী।
জানা গেছে, প্রখ্যাত সাংবাদিক, কলামিষ্ট অমর একুশের গানের স্রষ্টা আব্দুল গাফফার চৌধুরীর মৃতদেহ তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাংলাদেশে নেয়া হবে। মৃত্যুর আগে তিনি তার কাছের মানুষজন এবং ছেলে-মেয়েদের এমনটাই বলে গেছেন। বনানী কবরস্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশে তিনি নিজেই কবরের জায়গা নির্ধারণ করে গেছেন।
গাফফার চৌধুরীর লাশ এখনো বার্নেট হাসপাতালে আছে। তার ছেলে-মেয়েরা সেখানে আছেন। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুনা তাসনিম ও হাসপাতালে উপস্থিত আছেন। সেখানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে লন্ডন সময় বৃহস্পতিবার পরিবারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হবে।
মহান একুশের অমর সংগীতের রচয়িতা আবদুল গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (১৯ মে) সকাল ৬.৪৯ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রীয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন।
১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়ার চৌধুরীবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। তার বাবা হাজী ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা জহুরা খাতুন। ১৯৫০ সালে গাফফার চৌধুরী পরিপূর্ণভাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। ১৯৫১ সালে ‘দৈনিক সংবাদ’ প্রকাশ হলে গাফফার চৌধুরী সেখানে অনুবাদকের কাজ নেন। এরপর তিনি বহু পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন।
মাসিক সওগাত, দিলরুবা, মেঘনা, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদ ও পূর্বদেশসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন বরেণ্য এ সাংবাদিক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে সপরিবারে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হয়ে কলকাতা পৌঁছান। সেখানে মুজিবনগর সরকারের মুখপত্র সাপ্তাহিক জয়বাংলায় লেখালেখি করেন। এসময় তিনি কলকাতায় দৈনিক আনন্দবাজার ও যুগান্তর পত্রিকায় কলামিস্ট হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক জনপদ বের করেন।
১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যান তিনি। দেশে ফেরার পর তার স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসার জন্য প্রথমে কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে সুস্থ না হওয়ায় তাকে নিয়ে ১৯৭৪ সালের অক্টোবরে লন্ডনে যান। এরপর তার প্রবাসজীবনের ইতিহাস শুরু হয়।
সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি। ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘সম্রাটের ছবি’, ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, ‘বাঙালি না বাংলাদেশী’সহ তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা প্রায় ৩০। এছাড়া তিনি কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখেছেন।
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফফার চৌধুরী। ১৯৬৩ সালে ইউনেস্কো পুরস্কার পান তিনি। এছাড়া বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হয়েছেন।
এ জাতীয় আরো খবর..