অনলাইন নিউজ : আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
একই সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলেও বন্যা হতে পারে।
এছাড়া, বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পরে টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়েছে। টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে দেশের অন্তত ১২ জেলার ৭০ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। নয়টি নদীর ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেবে রবিবার বিকেল ৩ টায় নদ-নদীর ১০৯টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে ১৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল।
এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদী বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।
কুশিয়ারা নদী অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৭২ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। খোয়াই নদী বল্লায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং সোমেশ্বরী নেত্রকোণার কলমাকান্দা পয়েন্টে ১১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
যমুনা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে ফুলছড়িতে ২৯, বাহাদুরাবাদ ২৪ সেন্টিমিটার, সারিকান্দি ২৮ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ২৩ সেন্টিমিটার ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার উপরে ছিল রোববার বিকালে।
ব্রহ্মপুত্র তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে। এর মধ্যে নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৩, হাতিয়ায় ৮৬ এবং চিলমারীতে ৩৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ ছাড়া পানি দুধকুমার নদী পটেশ্বরী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার, ধরলা কুড়িগ্রাম পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার, তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার এবং ঘাঘট নদী গাইবান্ধা পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সুনামগঞ্জের অবস্থা একই রকম রয়েছে; পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে দশ জেলায়।
এই ১২ জেলার ৪০ লাখ পানিবন্দী মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী কোস্টগার্ডসহ রকারের অন্যান্য সংস্থা।
ভারতের আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের কিছু জায়গায় আরও দুদিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে; ফলে বাংলাদেশের প্রধান নদীসমূহের পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের আসামের সিলচরে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৮৯ মিলিমিটার, মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ২৫৩ এবং মিজোরামের আইজলে ৮৫ মিলিমিটার।
এই সময়ে সুনামগঞ্জের ১২৯ মিলিমিটার, সিলেটে ৩১৫, জাফলংয়ে ৩১৭, লালাখালে ৩১১, দক্ষিণবাগে ২০৫, জকিগঞ্জে ১৯৩, কানাইঘাটে ১১০ এবং শেওলায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ তরিকুল নেওয়াজ কবির বলেন, চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেটে। মৌসুমি বায়ু বেশি সক্রিয় থাকায় বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। দুদিন পর বৃষ্টির এমন প্রবণতা কমে আসতে পারে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে- রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বিজলী চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।