সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে সব পক্ষেরই সচেতনতা দরকার : আলোচনা সভায় অভিমত ক্ষতিপূরণ দাবি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ৫৯৫ টাকা কেজি দরে দিনে ১ কোটি টাকার গরুর মাংস বিক্রি করেন খলিল ঢাকায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭ বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পল্লী বিদ্যুতের ৭ জন বরখাস্ত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কর্মসূচি স্থগিত ন্যাশনাল মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী ও নজরুল কলেজে হামলা- ভাঙচুর, পরীক্ষা স্থগিত বরাদ্দের মধ্যেই দিবস পালন করতে হবে : জেলা প্রশাসক চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় আবদুল ওয়াহেদ নেতৃত্বাধীন প্যানেলের

আজ থেকে কঠোরতা, পদ্মা সেতুতে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা নিরাপত্তা-শৃঙ্খলায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২
  • ১৩৩ বার পঠিত
আজ থেকে কঠোরতা, পদ্মা সেতুতে নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা নিরাপত্তা-শৃঙ্খলায়
ফটো সংগৃহীত
অনলাইন নিউজ : স্বপ্নের পদ্মা সেতু পারাপারের আকাঙ্ক্ষা প্রায় সবার মধ্যেই। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রোববার সকাল পৌনে ৬টায় যানবাহন চলাচল শুরু হলেই সেতুর দুই প্রান্তে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এর মধ্যেও বিধিনিষেধ অমান্য করে পদ্মা সেতুতে উঠে নানা ধরনের বিকৃত কর্মকাণ্ড চালিয়েছে একশ্রেণির মানুষ। যাত্রী বা দর্শনার্থী হিসেবে গিয়ে পদ্মা সেতুর ওপর বসে প্রস্রাব করার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি কেউ একজন সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খুলেছে, কেউ কেউ নাচানাচি করে শুয়ে-বসে ছবি তুলে বা ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দিয়েছে। এসব বিকৃত কর্মকাণ্ড দেখে জনমনেও দেখা দিয়েছে তীব্র ক্ষোভ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এসব বিকৃত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় উঠেছে। এরই মধ্যে পদ্মা সেতুর রেলিংয়ের নাট-বল্টু খোলা সেই তরুণ বায়েজিদ তালহাকে রোববার বিকালে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জাতির স্বপ্ন ও আবেগের সঙ্গে জড়িত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলেছেন বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সেতুর ওপর এবং টোলপ্লাজার আশপাশে এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও সরঞ্জাম রয়েছে। উৎসুক মানুষের কেউ কেউ সেতুতে নেমে এসব মালামাল ও যন্ত্রাংশ চুরি  করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় সেতুতে যাতে কোনো যাত্রী বা দর্শনার্থী না নামে সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অনুরোধ জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।
রোববার পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং সাপোর্ট অ্যান্ড সেফটি টিমের (ইএসএসটি) কাছে পাঠানো হয়েছে। যদিও রোববার বিকাল থেকে সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিতদের আগের চেয়ে কঠোর হতে দেখা যায়। রোববার সেতুর দুই প্রান্তে সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। জাজিরা প্রান্তে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা দেখভালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে তৎপরতা চালাতে দেখা যায়। আজ সোমবার থেকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড করছে তারা বিকৃত মানসিকতার। যারা শুরু থেকেই পদ্মা সেতুর বিরোধিতা করেছে। পদ্মা সেতুর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে বলতে মনোভাবটাও একইভাবে তৈরি করেছে। তা না হলে দেশের এমন একটি গৌরবের পদ্মা সেতু নিয়ে এসব অপকর্ম করার কথা নয়। এসব ক্ষেত্রে যারা জড়িত তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই এ ধরনের বিকৃত কর্মকাণ্ড কমে আসবে। তা ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকাটি শিগগিরই হয়তো পুরোপুরি সিসি ক্যামেরার আওতায় চলে আসবে, তখন ওই এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে কেউ আর পার পাবে না।’
এ প্রসঙ্গে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ গণমাধ্যমকে বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুরু থেকেই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। সেতু কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয় তার আলোকে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে। আগামীতেও সেনাবাহিনীর উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মাওয়া এবং জাজিরা প্রান্তে দুটি অস্থায়ী সেনানিবাস স্থাপন করা হয়। এরপর গত ২৯ মে প্রধানমন্ত্রী জাজিরা প্রান্তে ‘শেখ রাসেল সেনানিবাস’ নামে একটি স্থায়ী সেনানিবাসের উদ্বোধন করেন। এই সেনানিবাস ভবিষ্যতেও পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী ও সেতু কর্তৃপক্ষের মধ্যে যে সমঝোতা চুক্তি হয় তার উল্লেখযোগ্য অংশ হলো- মাওয়া ও জাজিরা এলাকায় স্থাপিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ভূমিতে এবং নদীতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি এবং সরঞ্জামাদির নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্থায়ী নিরাপত্তা চৌকি ও অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন, মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা টহল ও নৌ টহল পরিচালনা, নদীপথে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য একটি করে ইমারজেন্সি রেসপন্স দল প্রস্তুত এবং সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক প্রকল্প এলাকার বাইরে যেকোনো অনভিপ্রেত ঘটনা যা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিরসনের জন্য সব কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের এসপি আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, পদ্মা সেতু ও আশপাশের নিরাপত্তা-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যেও কিছু কিছু উৎসুক মানুষ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেতুতে উঠে নানা কাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে সোমবার থেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রতিটি পিলারের গোড়ায় পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
উদ্বোধনের দুদিন আগেও পদ্মা সেতুর ওপর যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে ছবি তোলাসহ নানা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেতু কর্তৃপক্ষ। তারপরও পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ও পরদিন হাজার হাজার উৎসুক মানুষ বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে সেতুর ওপর উঠে যায়। সাধারণ মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাসের বিষয়টি মাথায় রেখে সেভাবে কঠোরতা দেখানো হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক ক্ষেত্রেই শিথিলতা দেখিয়েছে। আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে অনেকে। সেতুর ওপর যেন নিয়মভাঙার প্রতিযোগিতায় মেতেছিল অনেকে। যেখানে গাড়ি থেকে নামারই নিয়ম নেই, সেখানে দাঁড়িয়ে ইচ্ছেমতো ছবি, সেলফি, ভিডিও ধারণ, টিকটকের জন্য নাচানাচির উন্মাদনাসহ নানা কাণ্ড ঘটিয়েছে একশ্রেণির মানুষ। এর মধ্যে সেতুর ওপর বসে প্রস্রাব করা এবং নাট-বল্টু খেলার ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। কেউ কেউ এসব অপকর্ম পরিকল্পিতভাবেই করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে ‘নাট-বল্টু’ খোলার প্রসঙ্গে পদ্মা সেতুর প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, যে ভিডিওটি করেছে সে তো আইন ভঙ্গ করেছে। গাড়ি থামিয়ে সেতুতে নেমে এভাবে হাঁটাহাঁটি কিংবা ভিডিও করা আইনত নিষেধ।
এভাবে হাত দিয়ে নাট খোলা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দুই পাশের রেলিংয়ের কাজ শতভাগ এখনও শেষ হয়নি। কিছু কিছু জায়গায় কেমিক্যাল এখনও পুরোপুরি কাজ শুরু করেনি। ফলে আঠা হয়তো এখনও তেমন শক্তিশালী হয়নি। তবে এমনও হতে পারে ভিডিওধারণকারী ব্যক্তি আগে রেঞ্জ নিয়ে নাট খুলে পরে ভিডিও করেছে। বিষয়টি নিয়ে আরও ভালোভাবে জানা প্রয়োজন।
এসব বিষয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।
আজ থেকে কঠোরতা : গত বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ ঘণ্টা, সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। তারপরও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই উৎসুক জনতাকে ছবি তুলতে-ভিডিও ধারণসহ নানা বিকৃত কাণ্ড করতে দেখা যায়, যা নিয়ে ইতোমধ্যেই ব্যাপক নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইছে। তার মধ্যেই রোববার ফের পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাজনিত বিষয়ে সেনাবাহিনীকে চিঠি দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার থেকে সেতুর ওপর এবং আশপাশের এলাকায় আরও কঠোরতা দেখাবে নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্টরা।
রোববার দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা নির্বাহী ক্ষমতাবলে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুতে বিধিনিষেধের পাশাপাশি শৃঙ্খলা দেখভালের দায়িত্ব পালন করছিলেন।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে নির্বাহী ক্ষমতাবলে জাজিরা প্রান্তে পরিদর্শন করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সেতুতে উঠে ছবি, সেলফি তুললে কিংবা পদ্মা সেতুর ওপর বসলেই জরিমানা করা হবে। আমরা প্রথম দিনই দেখছি সাধারণ মানুষ সেতু পার হতে গিয়ে ছবি তুলছে। আজ রোববার প্রথম দিন শিথিল থাকলেও সোমবার থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নেব আমরা।
পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ : সোমবার রাতে তথ্য অধিদফতর থেকে জারিকৃত এক তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, ‘২৭ জুন (সোমবার) ভোর ৬টা থেকে পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।’ সেতু বিভাগের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..

© All rights reserved © 2009-2022 bddhaka.com  # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Developed BY ThemesBazar.Com