গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা : পদ্মা সেতু চালুর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে। যাত্রী ও যানবাহন পেতে ফেরিগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অনেক সময় অর্ধেক খালি রেখে ছাড়তে হচ্ছে ফেরি। এ ছাড়া গত পাঁচ দিনে এই নৌপথে যানবাহন কমেছে ৭ হাজার ৬৮৮টি। তবে ঈদে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক আসতে শুরু করলে ঘাটে চাপ বাড়বে বলে আশা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষের।
জানা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত ও রাজধানী ঢাকায় ঢোকার অন্যতম মাধ্যম হলো রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী এবং ৭ থেকে ৮ হাজার যানবাহন পারাপার হতো এ ঘাট দিয়ে।তবে পদ্মা সেতু চালুর পর যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নেমে এসেছে এক-তৃতীয়াংশে। রোববার (৩ জুলাই) সকালেও ফাঁকা ছিল এ ঘাট। মহাসড়কে নেই কোনো যানবাহনের সারি। ফেরি ও লঞ্চঘাটেও নেই যাত্রীদের তেমন উপস্থিতি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার গণপরিবহন যা আসছে, তা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে ফেরিতে উঠছে। অনেক সময় ধারণক্ষমতার অর্ধেক যানবাহন নিয়ে ফেরি পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটের চিত্রও একই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দৌলতদিয়ার পাঁচটি ঘাটেই ফেরি রয়েছে। যানবাহন ঘাটে এসেই ফেরিতে উঠছে। আগে ফেরির জন্য যানবাহন অপেক্ষায় থাকলেও বর্তমানে পরিস্থিতি উল্টো। যানবাহনের জন্যই দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরির। পাটুরিয়া থেকে বেলা ১০টার দিকে ফেরি ‘কপোতী’ দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ঘাটে এসে ভেড়ে। প্রায় আধঘণ্টা অপেক্ষার পর অর্ধেকের বেশি খালি রেখে মাত্র দুটি ট্রাক, তিনটি বাস ও দুটি ব্যক্তিগত গাড়িসহ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
পূবাশা পরিবহনে কর্মরত দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক সাল আহম্মদ বলেন, ‘এই ঘাট দিয়ে আমরা প্রতিদিন অন্তত ৬০টি ট্রিপ দিতাম। পদ্মা সেতু চালুর পর ট্রিপের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫-৬টিতে। দশর্না থেকে ঢাকা যেতে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হতে সময় লাগত ৭ থেকে ১০ ঘণ্টা। আর যানজট থাকলে তো সময় আরও বেড়ে যেত। পরিবহনের ট্রিপের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঘাট এখন যানবাহন শূন্য হয়ে পড়েছে।’
যশোর থেকে ছেড়ে আসা কাভার্ড ভ্যানচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যশোর থেকে চাল নিয়ে খুব ভোরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি ঘাট একেবারে ফাঁকা। ঘাটে এসে কোনো অপেক্ষা ছাড়াই ফেরিতে উঠতে পেরে ভালো লাগছে। এতে ভোগান্তি কমেছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার কমে গেছে। গত পাঁচ দিনে এ ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার কমেছে ৭ হাজার ৬৮৮টি। কয়েক দিন পর কোরবানির ঈদ। তবে আশা করছি, সে সময় গরুর ট্রাকসহ যানবাহনের একটু চাপ বাড়বে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ২১টি ছোট-বড় ফেরি আছে। এর মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। বাকি ৪টি ফেরির মধ্যে একটি ইউটিলিটি ফেরি চন্দ্রমল্লিকা পাটুরিয়ার মধুমতী ভাসমান কারখানা ডকইয়ার্ডে মেরামত করা হচ্ছে। যানবাহন কম থাকায় ৩টি টানা (ড্যাম্প) ফেরি বসিয়ে রাখা হয়েছে। তবে গাড়ির চাপ বাড়লে ফেরির সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..